ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যে আচরণ করবেন না

লাইফস্টাইল ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যে আচরণ করবেন না

আমরা হয়তো আমাদের জীবনসঙ্গীকে এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা শুনাই, যা নিয়ে পরে আমাদের আফসোস হয়। কিন্তু এমন কিছু আচরণ রয়েছে যার ফলে সম্পর্কে ঘুন ধরার পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদও ঘটতে পারে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

তালাকের ভয় দেখাবেন না: আপনি তাকে তালাকের ভয় দেখালে পরে পস্তাবেন। ‘ফ্লার্ট ফর ফান অ্যান্ড মিট দ্য ওয়ান’ বইয়ের লেখক ট্রেসি স্টেইনবার্গ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তালাকের ভয় দেখানোর ফলে প্রকাশ পায় যে আপনি বিয়েটি নিয়ে পুরোপুরি দায়িত্বশীল নন। তাছাড়া এর ফলে সে বঞ্চিত এবং ব্যথিত অনুভব করে এবং আপনাকে ভয় পেতে শুরু করে। যার ফলে তার মনের গহীনে থাকা ভালোবাসা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।’ একবার যদি এই কথা বলে ফেলেন তাহলে আপনার সম্পর্কটি ক্ষয় হতে শুরু করে। যদিও আপনি ভেবেচিন্তে কথাটা বলেননি। তারপরও এই কথাটি তার মনে বজ্রের মতো আঘাত হানবে। এন্টোনিয়া হল নামে একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন, ‘আপনার দাম্পত্যজীবন চরম দুর্যোগের মধ্য দিয়ে না গেলে এবং আপনি ও আপনার সঙ্গী সম্পর্ক টেকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা না করা পর্যন্ত তালাক শব্দটি উচ্চারণ করা উচিত নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘তালাকের কথা উল্লেখ করা মাত্রই আপনার সঙ্গী চরমভাবে আহত হতে পারে এবং তার মনে আপনার যে স্থানটি আছে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

মিথ্যাবাদী বলবেন না: বিশ্বাস একটি সফল সম্পর্কের পরিচায়ক। আপনার যদি মনে হয় সে মিথ্যা বলছে এবং আপনি যদি তাকে সরাসরি মিথ্যাবাদী বলেন তাহলে সেটা আপনাদের সম্পর্কের জন্য চরম নেতিবাচক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। বরং আপনি যদি কথাটা তাকে একটু ঘুরিয়ে বলেন তাহলে হয়তো ব্যাপারটা খারাপের দিকে নাও যেতে পারে। তাছাড়া এটা আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় যা তার ভালো লাগতেও পারে। সবসময় ঘ্যানঘ্যান না করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকলে তা ভালোভাবে আপনার সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করুন, তাতে আপনাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে ছাড়া কমবে না। লরা লইড নামে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আপনার সঙ্গীর কথার প্রাধান্য দিয়ে আগে তার কথা শুনুন তারপর বলুন; এতে করে আপনি তার সাথে আরো গুছিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন এবং সেই কথা অনুযায়ী সঠিক আচরণটি করুন তার সাথে।’

কোথায় কী বলতে হবে সেটা শেখাতে যাবেন না: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তার সঙ্গীর সাথে অতিরিক্ত ক্যাটক্যাট করেন। কোথায় কি করতে হবে না করতে হবে এবং কোথায় কি বলতে বা না বলতে হবে সেটা তিনি অবশ্যই বোঝেন; কেননা তিনিও একজন প্রাপ্তবয়স্ক। যদি আপনার মনে হয় সে সেটা বোঝে না, তাহলে তাকে সাহায্য করুন, বুঝিয়ে বলুন। অযথা তাকে বেশি ঘাটবেন না। এতে বিরক্তির সাথে রাগও হয় যা প্রায়শই দাম্পত্য কলহে রূপ নেয়। এ বিষয়ে লরেল হাউস নামে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আপনার সঙ্গী ভুল কিছু করে থাকলে বা বলে থাকলে তার ভয় দূর করার দায়িত্ব আপনার, তাই তাকে সঠিকভাবে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন।’ আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে চড়া গলায় প্রতিনিয়ত শাসন করতে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি তার রাগের পরিমাণ বাড়বে এবং সে আপনার উপর মনক্ষুন্ন হতে পারে। তার উপর রেগে গিয়ে কিছু বলার আগে ভাবুন এবং তার কথা বা মতামত শুনুন। মন খুলে শুনুন সে কি বলতে চায়, তার মতামত কী। অনেক সময় মতামতের প্রাধান্য একটি সম্পর্ককে মধুর সম্পর্কে পরিণত করে তোলে।

নির্লিপ্ত আচরণ বাদ দিন: হয়তো আপনার সঙ্গীর কোনো আচরণ আপনার খারাপ লেগেছে কিন্তু আপনি তা বলেননি। সে জিজ্ঞেস করাতে আপনি তাকে কোনো উত্তর দিলেন না বরং বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন। এতে করে মনে মনে আঘাত পেতে পারে। আপনি হয়তো মনে করেছেন যে উত্তর দেওয়ার ফলে ঝগড়া বাধতে পারে। সে কিন্তু সেটা বুঝবে না, বোঝার কথাও নয়, আপনি হলে আপনিও বুঝতেন না। সুতরাং আপনার এই নির্লিপ্ততা আপনাদের দাম্পত্য কলহের কারণ হতে পারে। অ্যান্ড্রিয়া সিরটাশ নামে এক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বলেন, ‘অনেকসময় ঝগড়ার ফলেও একটি সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনার আগে জানতে হবে কিভাবে ঝগড়া করতে হয়। আপনার সঙ্গী কিছু বললে আপনি যদি তার উত্তর না দেন, পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সঙ্গী যাই বলুক, উত্তর দিন। নির্লিপ্ত থাকবেন না। আপনি তার সাথে সহমত পোষণ করছেন না এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার অনুভূতিগুলো তাকে জানান, রাগ হলে রাগ করুন, চেঁচাতে ইচ্ছা হলে চেঁচান। আপনার অনুভূতিগুলো ঢেলে দিন তার হাতে। তাকে বোঝান আপনি তাকে ভালোবাসেন।’ যদি আপনার চিৎকার চেঁচামেচি ভালো না লাগে তাহলে শান্ত হয়ে তার সাথে বসে সবকিছু ভাগাভাগি করে নিন। ভালোভাবে তাকে বোঝান।

সরাসরি অভিযোগ তুলবেন না: অযথা হুটহাট করে আপনার সঙ্গীর উপর অভিযোগ তুলে কথা বলবেন না। এটা কেন করোনি, ওটা কেন করোনি এ ধরনের কথা কলহের জন্ম দেয়, যা আপনাদের দুজনের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। আপনি যখন আপনার সঙ্গীর উপর ঘনঘন অভিযোগ তুলবেন তা তার মনে চরম আঘাত হানবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপনার এরকম আচরণ আপনাদের সম্পর্কটাকে তালাকের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। অভিযোগ না তুলে স্বাভাবিক কথা বলুন। আপনার রাগ যত নিয়ন্ত্রণে থাকবে আপনার সম্পর্ক তত সুন্দর হবে।

ভালোবাসা যাচাই করতে যাবেন না: আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে পরিস্থিতিতে ফেলে যাচাই করতে যান যে, সে আপনাকে কতটুকু ভালোবাসে বা আদৌ ভালোবাসে কিনা তাহলে চরম ভুল করবেন। আপনার সঙ্গীকে চাপে ফেলে কখনও এটা করতে যাবেন না। এতে সে ব্যথিত হবে এবং আপনার প্রতি তার ভালোবাসা ক্ষুন্ন হবে। আপনার জন্য তার ভালোবাসা প্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার ভালোবাসা আপনি তাকে দিন। সে তার নিজ দায়িত্বে তার ভালোবাসা আপনাকে দেবে। এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া সবার ভালোবাসা প্রকাশের ধরন একরকম নয়, সবাই একভাবে ভালোবাসে না। এটা আপনাকে বুঝতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ভালোবাসা যাচাই করতে যেয়ে অনেকসময় সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। সুতরাং এটা করা থেকে বিরত থাকুন।

নির্বোধ প্রতিপন্ন করবেন না: আপনার সঙ্গীকে এমন কিছু কখনও বলবেন না যাতে সে নিজেকে ছোট মনে করে। কেউই নির্বোধ প্রতিপন্ন হতে বা ছোট হতে চায় না। কোনো ব্যাপার নিয়ে যদি আপনি আপনার সঙ্গীর উপর মাতব্বরী খাটান তাহলে তাকে ছোট করার পাশাপাশি অপমানিত করা হয় যা কেউই চাইবে না। একটা কথা বলে ফেললে তা আর ফেরানো যায় না। সুতরাং একবার তাকে এভাবে আঘাত করার পর আপনি তাকে যতই বোঝান, কাজ হবে না। সুতরাং এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন যেন সে মনে কষ্ট না পায়। আপনার সঙ্গীকে সবসময় সবকিছু মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। তারও বুদ্ধিমত্তা আছে। সে তার বুদ্ধি ব্যবহার করে তার কাজ সামলে নেবে। অনেকসময় বেশি ভালো করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়