ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

শিশুকে যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৬ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ১৬:০৩, ৩ নভেম্বর ২০২০
শিশুকে যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার উপায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শিশুদেরকে যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদেরকে সচেতন হবে। তাদেরকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখার জন্য ঘরেই উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। এ ব্যাপারে পিতামাতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

শুধু অপরিচিতরাই নয়

যদি আপনি চিন্তা করেন যে, আপনার শিশুকে অপরিচিতদের কাছ থেকে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করবেন এবং শপিং মলে তাদের অতিরিক্ত টাইট করে ধরে রাখবেন, তাহলে আপনি আংশিকভাবে সঠিক আছেন। ইউ.এস. জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট’স ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিক (বিজেএস) অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ৬ বছরের কম বয়সের ৩ শতাংশ এবং ৬ থেকে ১১ বছর বয়সের ৫ শতাংশ শিশু যৌন নিপীড়ন হয়ে থাকে অপরিচিত দ্বারা।

শিশুদের বিশ্বাস অর্জন হচ্ছে যৌন নিপীড়নের একটি অংশ, অধিকাংশ যৌন নিগ্রহ শিশুদের পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা হয়ে থাকে এবং প্রায়ক্ষেত্রে তাদের ঘরেই হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল চাইল্ড ট্রমাটিক স্ট্রেস নেটওয়ার্কের সদস্য এবং শিশু যৌন নিপীড়ন চিকিৎসার ডেভেলপার ইসথার ডেবলিঞ্জার বলেন, ‘যৌন সুযোগ-সন্ধানীরা যে রাস্তাঘাটে ঘুরঘুর করবে তা নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা শিশুদের কাছে পরিচিত ও বিশ্বস্ত এবং পরিবারের সদস্য হয়ে থাকে।’

নিউ ইয়র্কে অবস্থিত মন্টেফিয়োর মেডিক্যাল সেন্টারের অন্তর্গত দ্য চিলড্রেন’স হসপিটালের জে.ই. অ্যান্ড জেড.বি. বাটলার চাইল্ড অ্যাডভোকেসি সেন্টারের কার্যনির্বাহী পরিচালক কারেল আর. অ্যামারেন্থ বলেন, ‘প্রতিবেশী, পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বেবি সিটার, কোচ, স্কাউট লিডার এবং বিশ্বস্ত ও কর্তৃত্বের আসনে থাকা যে কেউ যৌন নিগ্রহকারী হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা সেসব মানুষদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলছেন যারা আপনার শিশুর সঙ্গে এক্সক্লুসিভ কন্টাক্ট চায়, অর্থাৎ আপনার শিশুকে একা পেতে চায়। বিশেষজ্ঞরা শিশুদেরকে মুক্তমনা প্রকৃতির কারো সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যেতে না দেওয়ার জন্য বলছেন, এমনকি শিশুদের প্রিয় ব্যক্তির সঙ্গেও নয়।

অ্যামারেন্থ বলেন, কিন্তু আপনি আপনার শিশুকে এ বার্তা দেবেন না যে ‘জগৎটা খারাপ অথবা ভয়ংকর স্থান’ অথবা ‘প্রত্যেক প্রিয় লোককেই ভয় করা উচিত।’ সুতরাং কিভাবে আপনি শিশুর সুরক্ষা এবং তাদের বিকাশ ও বিশ্বাসের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করবেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আপনার সঙ্গে আপনার শিশুর সচেতনতা ও বিশ্বাস বা আস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুরু হবে।

নিরাপত্তামূলক সম্পর্ক তৈরি করুন

অ্যামারেন্থ বলেন, ‘শিশুদেরকে যৌন নিগ্রহ থেকে রক্ষার্থে পিতামাতার জন্য অন্যতম সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে বাজে ঘটনা ঘটার পূর্বেই প্রতিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’ এটি করার জন্য পিতামাতাকে এগিয়ে আসতে হবে, শিশুর বয়সের ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে যৌন নিগ্রহের কনসেপ্ট বুঝিয়ে দিতে হবে এবং যৌন নিপীড়নের সম্ভাবনা থাকলে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার শিক্ষা দিতে হবে।

পেনসিলভানিয়ায় অবস্থিত লাসাল্লে ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী ডোনা ফিল্ডার বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে আপনি তাদের কাছ থেকে সহজে জানতে পারবেন যে তারা ভবিষ্যতে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছে কিনা। তারা এ বিষয়ে বলতে দ্বিধা করবে না এবং ভীত বা লজ্জিত হবে না।’ তিনি বলেন, ‘তাদেরকে যৌন নিপীড়ন কী তা বোধগম্য করানো গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাও জানানো গুরুত্বপূর্ণ যে এটি তাদের ভুল নয়। শিশুদেরকে বয়সভিত্তিক উপায়ে পুরোপুরি বোঝাতে হবে যে যাই ঘটুক না কেন, তারা এর জন্য দায়ী নয়।’

ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ ও গোপন স্পর্শ

আরো পড়ুন:

কিন্তু আপনি এ ধরনের কঠিন অথবা বিব্রতকর টপিক নিয়ে কিভাবে শিশুদের সঙ্গে কথা বলবেন? শিশু-প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা ‘ভালো স্পর্শ’, ‘খারাপ স্পর্শ’ এবং ‘গোপন স্পর্শ’ ধারণা ব্যবহার করে খুব অল্প বয়সেই আলোচনা শুরু করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। অ্যামারেন্থ বলেন, ‘ব্যাখা করুন যে আলিঙ্গন, পিঠে হাত বুলানো কিংবা গালে চুমু দেওয়া হচ্ছে ভালো স্পর্শ, আঘাত করা কিংবা ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে খারাপ স্পর্শ এবং গোপন স্পর্শ হচ্ছে তা যখন কেউ স্পর্শ করতে চায় এবং এটি গোপন রাখতে বলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘শিশুদেরকে বলুন যে যদি কেউ গোপন স্পর্শ করতে চায় তাদেরকে ‘না’ বলা উচিত এবং অবিলম্বে এ বিষয়ে আব্বু বা আম্মুকে জানানো উচিত।’

এছাড়া ফিল্ডার বলেন যে, পিতামাতারা তাদের সন্তানদেরকে ‘গোপন স্পর্শর জায়গা বোঝানোর জন্য গোসলের পোশাক বা সাঁতারের পোশাকের প্রসঙ্গ টানতে পারেন। ফিল্ডার বলেন, ‘আপনি তাদেরকে বলুন যে গোসলের পোশাক শরীরের যতটুকু স্থান আবৃত রাখে তা হচ্ছে তাদের গোপনাঙ্গ এবং এসব জায়গায় কাউকে স্পর্শ করতে দেওয়া উচিত নয়। শিশুদের বয়স বাড়লে বয়সের ওপর ভিত্তি করে আরো বর্ণনা যোগ করা যেতে পারে।’

উভয় বিশেষজ্ঞ বলেন যে, পিতামাতাদের এই বিষয় নিয়ে শিশুদের সঙ্গে খুব ঘনঘন কথা বলা প্রয়োজন। অ্যামারেন্থ বলেন, ‘পারিবারিক আলাপে এটিকে স্থান দিন। যখন আপনার শিশু স্কুল থেকে ফিরে তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে কেউ ভালো স্পর্শ দিয়েছে কিনা, তারপর খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে বলতে বলুন এবং শেষে জানতে চান যে কেউ গোপন স্পর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিনা। যদি শিশুরা এসব টার্ম শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তারা এই বিষয়ের ওপর আপনার সঙ্গে তথ্য শেয়ার করতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’

আপনার শিশুকে লক্ষ্য করুন

আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তাদের স্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করুন। এটি করার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ এটি যৌন নিগ্রহের প্রথম লক্ষণ ধরতে সাহায্য করে। ওয়াশিংটনে অবস্থিত হার্বারভিউ সেন্টার ফর সেক্সুয়াল অ্যাজল্ট অ্যান্ড ট্রমাটিক স্ট্রেসের পরিচালক লুসি বার্লিনার বলেন, ‘যদি কোনো শিশুর আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে, যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাহলে পিতামাতার এর প্রকৃত কারণ তদন্ত করা উচিত এবং সম্ভাবনা হিসেবে যৌন নিপীড়ন অথবা অন্যান্য ট্রমাটিক অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আচরণ পরিবর্তনের প্যাটার্ন লক্ষ্য করাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কোনো আত্মীয়, সৎবাবা, প্রতিবেশী অথবা কোনো নির্দিষ্ট ইভেন্টের প্রতি, যেমন- খেলাধুলা অনুশীলন অথবা স্কাউট মিটিং। অ্যামারেন্থ বলেন, ‘আপনার শিশু কি কোনো আত্মীয় বা বয়স্ক ছেলের সঙ্গে অথবা কোনো ক্লাসে সময় কাটাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে? আপনার এসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন না

বিশেষজ্ঞরা পিতামাতাদের যাচাই-বাছাই ব্যতীত অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। অ্যামারেন্থ বলেন, ‘কিছু শিশু জিম ক্লাস পছন্দ নাও করতে পারে এবং কোনো শিশু কোনো আত্মীয়কে পছন্দ নাও করতে পারে, কারণ তার চুলের কাটিং ভীতিকর অথবা শ্বাসে দুর্গন্ধ। কোনো ক্লু বা সিগন্যাল বা লক্ষণের প্রতি মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এসব ক্লু তাদের সার্বিক আচরণ অনুযায়ী কতটুকু প্রাসঙ্গিক তাও মূল্যায়ন করতে হবে।’

ফিডলার বলেন, ‘কোনো একক পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব নাও হতে পারে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার শিশুকে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করুন যে, কোনো ব্যক্তি বা ইভেন্টের প্রতি তারা কেন অস্বস্তিবোধ করছে। অ্যামারেন্থ বলেন, বয়স্ক শিশুদের কাছ থেকে প্রকৃত কারণ জানার সম্ভাবনা কম, কিন্তু অল্প বয়স্ক শিশুরা প্রায়ক্ষেত্রে আসল কারণ প্রকাশ করে থাকে।’

তথ্যসূত্র : ওয়েব এমডি

পড়ুন : 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়