ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২১ ১৪৩১

ব্যক্তিগত সমস্যা কি অফিসের বসকে জানাবেন?

আফরিনা ফেরদৌস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যক্তিগত সমস্যা কি অফিসের বসকে জানাবেন?

আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যা ভুগি। হতে পারে সেটা সম্পর্কের টানাপোড়েন, হতে পারে প্রিয় কিছু হারানোর কষ্ট অথবা তার থেকেও গুরুতর কিছু। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এই ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোকে মাথায় নিয়েই আমাদেরকে কর্মজীবন চালনা করতে হয়।

ব্যক্তিগত সমস্যা কর্মজীবনকে অনেকভাবে প্রভাবিত করে। যখন আপনি আপনার কোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তায় থাকবেন তখন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া বা বেখেয়ালেই কোনো ভুল করে ফেলাটা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো আপনার অফিসের বস বা ম্যানেজারের সঙ্গে শেয়ার করা কি আদৌ উচিত?

ম্যানেজার বা বসকে খোলা মনে কিছু বলার পূর্বে অবশ্যই চিন্তা করে দেখবেন, সমস্যাটি আপনার কাজ সংক্রান্ত কিনা বা এটা কী ধরনের আলোচনা হতে পারে, আপনার বসের ব্যক্তিত্ব কেমন এবং সে আপনাকে আদৌ সাহায্য করতে পারবেন কিনা। সব ধরনের সমস্যার কথা কর্মক্ষেত্রে বলার উপযোগী নয়। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলা আপনার এবং আপনার বসের জন্য ভালোও হতে পারে।

নিচের প্রশ্নগুলো আগে নিজেকে করুন যে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা কথা আসলেই বসকে বলা উচিত কিনা বা কখন বলা উচিত।

কর্মক্ষেত্রে কি আপনার কিছু দরকার?

হয়তোবা আপনার কাজের চাপ কমানো দরকার অথবা কাজ করার জন্য একটু আলাদা ব্যক্তিগত জায়গা দরকার যাতে করে আপনি আপনার চারপাশের ভিড় এড়াতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে কোনো কিছু দরকার হলে বা ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই ম্যানেজারকে বলা উচিত। কিন্তু আপনি ঠিক জানেন তো যে বসকে আসলে কী বলতে চাইছেন। তাই কোনো কিছু দরকারি হোক বা অনুরোধ, বলার আগেই ভালো করে চিন্তা করে নিন।

আপনি যদি ঠিকভাবে বলতে বা বোঝাতে না পারেন যে আপনার কী দরকার তাহলে আপনি এই বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনি চাইলেই তাকে কাজের বন্ধু মনে করে সবকিছু বলতে পারেন না।

বস কি আসলেই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে?

মনে করুন, আপনি অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার ব্যাপারে বসের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু এটা ভেবে দেখেছেন কী যে, আসলেই আপনার বস আপনাকে এই ব্যাপারে কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবেন কি না। আপনার বস কী চাইলেই আপনার কাজের চাপ কমিয়ে দিতে পারেন বা সাময়িকভাবে আপনার কিছু কাজ অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে বসকে আপনার অসুবিধার কথাগুলো বলতে পারেন।

তবে এমন কোনো কিছুর পিছনে সময় নষ্ট করবেন না, যেটা আপনি জানেন যে তারা দিতে পারবে না কিন্তু আপনি চাইছেন। যদি আপনার বসের আপনার সমস্যা সমাধান বা সহজ করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আপনার বসকে সমস্যার কথা বলাটা কার্যকরী হবে না।

ব্যক্তিগত সমস্যা আপনার কাজকে প্রভাবিত করছে কি?

কোনো কর্মচারী যদি কাজে অমনোযোগী থাকে বা কর্মক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটে তাহলে একজন ভালো ম্যানেজার অবশ্যই সেই কর্মচারীকে তার সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইবেন। যদি তারা কারণগুলো না জানেন তাহলে ভাববেন হয় আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন অথবা আপনি আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বা আপনার উদ্দেশ্য ঠিক নয়। তাদের টিমকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য কাজের বাইরে অন্য কি চলছে তা তাদের জেনে রাখা ভালো।

তবে সমস্যাগুলো যদি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে আপনার প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় তাহলে আপনার উচিত হবে তা নিয়ে কথা বলা। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা বললে আপনার ম্যানেজার নিজেও চিন্তা করবেন যে, আপনি আপনার কাজের প্রতি মনোযোগী এবং কাজের কোনো প্রকার ব্যাঘাত চান না। আরো ভালো হয় যদি আপনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে থাকেন।

তবে যদি সকল সমস্যার মধ্যেও আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন তাহলে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো বসকে জানানোর দরকার পড়ে না।

আপনার বস আসলে কী পছন্দ করেন?

কর্মক্ষেত্রে একটি গন্ডির মধ্যে থাকা ভালো। তবে যদি আপনি জেনে থাকেন যে, আপনার বস কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সমস্যাকে তার কাজের সাথে তুলনা না করে শুধু তার কাজকে মূল্যায়ন করে তাহলে সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। তবে কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলার আগে, যে ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কিছুটা হলেও জেনে নেওয়া ভালো। কারণ যিনি নিজেই অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন তিনি নিজে আপনার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

যেকোনো ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করার আগে নিজে যাচাই করুন আপনি নিজে তাকে কতখানি বিশ্বাস করেন এবং সে আপনাকে কতখানি বিশ্বাস করে, বিশেষ করে আপনার কলিগদের ক্ষেত্রে। অবশ্যই বিশ্বাসী কাউকে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলবেন তা না হলে আপনার সমস্যা তার কাছে হাস্যকর মনে হবে অথবা তার গল্প করার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তবে কলিগদেরকে কোনো কিছু বলার থেকে সরাসরি নিজের বসকে বলা ভালো। কারণ আপনার বস আপনার সমস্যার ব্যাপারে যদি অন্য কোনো মানুষের থেকে জানতে পারেন তাহলে সেটা একটি অফিস কর্মক্ষেত্রের জন্য ভালো হবে না। তার চেয়ে আপনি সরাসরি আপনার বসকেই সমস্যার কথা খুলে বলুন। অন্যথায় আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা সারা অফিসের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে। এই ধরনের কিছু হওয়ার থেকে নিজের কথা নিজের মধ্যে রাখাই ভালো হবে।

কতটুকু কথা শেয়ার করবেন?

মনে করুন সকল চিন্তা ভাবনার পর আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে বসের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ঠিক কতটুকু সমস্যার কথা বলবেন সেটা ঠিক করেছেন কি? মূলত আপনি বসকে কতটুকু কথা বলবেন সেটা নির্ভর করে আপনাদের সম্পর্কের ওপর। যেমন, আপনি আপনার এমন কোনো অসুস্থতার কথা বসকে বলতে পারেন যে রোগে আপনি বহুদিন ধরে ভুগছেন। এটা বলার কারণ হলো যাতে করে সে আপনার উপর থেকে কাজের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, আপনি যাতে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন তার জন্য ছাড় দিতে পারে অথবা কোনো কাজ দেওয়ার আগে তা জমা দেওয়ার তারিখটা পিছিয়ে দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনার শারীরিক অবস্থার বা ট্রিটমেন্টের সব বিবরণ আপনার বসকে বলার দরকার পড়ে না।

অথবা আপনার পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। আপনি সেই অবস্থা থেকে বের হতে চাচ্ছেন। তার জন্য সময় দরকার, কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার। এখন যদি আপনি আপনার বসকে বলেন এই কারণে আপনার প্রজেক্ট জমা দিতে দেরি হবে, তাহলে তো আর তিনি সেটা শুনবেন না। কারণ আপনার সম্পর্কগুলো আপনার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এগুলো নিয়ে কখনোই অফিসের বসের সাথে কথা বলা ঠিক নয়। এটার প্রভাব খারাপ হতে পারে।

অনেক সময় অফিসের বসকে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলার দরকার হয়। এতে করে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার- পরিবেশ ঠিক আছে কি, সম্পর্ক কেমন, কতটা বিশ্বাসী। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার যে, বস বা ম্যানেজারকে সমস্যার কথা বলার মূল কারণ এর মাধ্যমে যাতে একটি সাময়িক সমাধান পাওয়া যায়। আপনি মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে তো আর অফিসের কাজ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অফিস কর্তৃপক্ষকে কিছুটা সহনশীল হওয়া দরকার।



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়