টিকা নেওয়ার আগে ও পরে: কী খাবেন, কী খাবেন না
করোনাসৃষ্ট মহামারিতে এক বছর কেটে গেছে। ইতোমধ্যে গবেষকরা টিকা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের দেশেও চলছে টিকাদান কার্যক্রম।
টিকা নিলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। টিকা নেওয়ার আগে ও পরে খাবারের প্রতি মনোযোগী হলে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ বা প্রশমন হতে পারে।
ঘুম সহায়ক খাবার
টিকা নেওয়ার আগের রাত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রামের জন্য ঘুমের চেয়ে উত্তম কিছু হতে পারে না। তাই যেদিন টিকা নেবেন, তার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার (ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, ডাল জাতীয় খাবার, বাদাম ও বীজ) কম খেলে এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও চিনিযুক্ত খাবার (চর্বিযুক্ত মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ও মিষ্টি খাবার) খুব বেশি খেলে ঘুম বিঘ্নিত হতে পারে। এর বিপরীতে, আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে গভীর ঘুম হয় ও ঘুমের মান বাড়ে। ঘুমাতে যাওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নিন। ঘুমাতে যাওয়ার ছয় ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি পরিহার করুন।
প্রচুর পানি পান
টিকা নেওয়ার পর কেমন অনুভব করবেন নির্ভর করবে শরীরে কতটুকু পানি আছে তার উপর। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের (আইওএম) মতে, প্রতিদিন একজন নারীর ২.৭ লিটার এবং পুরুষের ৩.৭ লিটার পানি প্রয়োজন। আমাদের শরীরে প্রায় ২০ শতাংশ পানি আসে খাবার থেকে। এটা বাদ দিলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আরো ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। যারা শরীরচর্চা করেন তাদের এর বেশি পানি পান করা উচিত। পানি পানের জন্য দিনকে ৪টি ব্লকে ভাগ করুন: ১) সকালে ঘুম ভাঙা থেকে মধ্যসকাল, ২) মধ্যসকাল থেকে দুপুরের খাবার সময়, ৩) দুপুরের খাবার সময় থেকে মধ্যবিকাল এবং ৪) মধ্যবিকাল থেকে রাতের খাবার সময়। প্রত্যেক ব্লকে দুই গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সেল ফোনে রিমাইন্ডার সেট করুন।
শর্করা নিয়ন্ত্রণে খাবার খান
টিকা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। টিকা গ্রহণ সংক্রান্ত দুশ্চিন্তার কারণে এমন ঘটে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে টিকা নেওয়ার পূর্বে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ জন্য সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, পুষ্টি ও আঁশ সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খেতে পারেন।
সহজপাচ্য খাবার খান
কিছু লোকের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমিভাব হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, যেসব খাবার সহজে হজম হয় না, সেগুলোই বমি হওয়ার জন্য দায়ী। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে সবজির স্যুপ, কলা, সস, তরমুজ, ডাবের পানি, বাদামী চালের ভাত ও আলু খেতে পারেন। ভাজা খাবার, মাংস ও চিনিযুক্ত খাবারের মতো ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। বমিভাব কমে গেলে সতেজ খাবার খেতে থাকুন। বমিভাবের পরিবর্তে ক্ষুধা কমে যেতে পারে, তারপরও আপনাকে কিছু সময় পরপর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনুন, যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বাদ না পড়ে।
মদপান করবেন না
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা নেওয়ার কিছুদিন আগে ও পরে মদপান থেকে বিরত থাকা উচিত। এ সময় মদপান করলে শরীর পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। তখন তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া মদপানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে পারে। তখন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা কমে যাবে। অ্যালকোহল রিসার্চ নামক জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, মদপান ও দুর্বল ইমিউন রেসপন্সের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া মদপানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার নয়
গবেষণায় দেখা গেছে, চলমান মহামারির সময় মানুষ লবণ, চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেয়েছেন। গবেষকদের মতে, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার সময় এ ধরনের তৃপ্তিকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এটা দীর্ঘসময় থাকলে ইমিউন সিস্টেমের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। ২০২০ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা ধারণা করছেন, টিকা নেওয়ার পর পুষ্টিকর ও প্রদাহরোধী খাবার ইমিউন সিস্টেমের জন্য সহায়ক। টিকা গ্রহণের পর বেশি করে সবজি ও ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।