ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

শরীয়ত মোতাবেক কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

প্রকাশিত: ১৪:০০, ২০ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৮:৪০, ২০ জুলাই ২০২১
শরীয়ত মোতাবেক কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

পবিত্র কুরআনুল কারীমে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)

অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন জবাই করবে, তখন ইহসানের (আসানির) সাথে জবাই করো, আর তোমাদের ছুরিগুলো খুব ভালোভাবে ধারালো করে নাও, যাতে তোমরা তোমাদের জবাইকৃত পশুকে আরাম দিতে পারো।’ (সহীহ মুসলিম)

মুসলিম সমাজের সর্ববৃহৎ আনন্দ উৎসব ঈদের দ্বিতীয়টি আমাদের সামনে উপনীত। আমরা কোরবানি ঈদ বা ঈদুল আজহা পালন করছি। এই ঈদুল আজহা হজ-এর একটি অংশ। এতে যারা হাজী তাদের কোরবানি করতে হয়। আর যারা হজে গমন করেননি তারা তাদের উপর ওয়াজিব হলে স্ব-স্ব স্থানে অথবা সুবিধাজনক স্থানে কোরবানি করবেন। 

আমাদের দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করা হয়। কোরবানির পশু কীভাবে জবাই করবো এ নিয়ে অনেকগুলো ভুল-ভ্রান্তি আমাদের মধ্যে রয়েছে। এই লেখায় চেষ্টা করবো সে বিষয়ে আলোকপাত করতে। 

কোরবানির পশু শোয়ানোর পর যেন কিবলামুখী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পশ্চিম দিকে যেহেতু আমাদের কিবলা সেই হিসেবে পশ্চিম দিকে যাতে পশুর মুখ হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। অর্থাৎ পশুকে বাম পাজরের উপর, দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে কিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। এভাবেই পশুকে শোয়ানো উত্তম। পশুটিকে এমনভাবে ধরতে বা বেঁধে নিতে হবে যেন জবাইয়ের সময় সে পাগুলো বারবার ছুড়তে না পারে। 

উটের ক্ষেত্রে নাহর করা যায়। বিষয়টি হলো দাঁড়ানো অবস্থায় বুকের দিক থেকে ঘার পর্যন্ত চলে যাওয়া প্রধান রক্তবাহী রগ কেটে দেয়া হয়। নাহর করলে রক্তক্ষরণ হতে হতে উট নিস্তেজ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে এবং মৃত্যু হয়। উটকেও শোয়া অবস্থায় জবাই করা যায়।

জবাই করার সময় যাতে পশু কষ্ট না পায় সেজন্য যে ছুরিটি ব্যবহার করা হবে তা আগেভাগেই শান দিয়ে খুব ধারালো করে নিতে হবে। পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বললেও চলবে।

যে বা যারা কোরবানির পশু জবাই করবেন বা ধরবেন তারা পবিত্র বা অজু অবস্থায় থাকবেন। কাপড়-চোপর শালীনভাবে পরিধান করবেন। ফরয তরক করে বা ছতর না ঢেকে জবাই কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়।

পশুকে শোয়াতে কষ্ট হলে বা বেগ পেতে হলে শোয়ানোর পরে রেগে গিয়ে পশুর শরীরে কিল, ঘুষি, লাথি মারা বা আঘাত করা যাবে না। যিনি বা যার পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়া হচ্ছে তার নিজের হাতে জবাই করা উত্তম। অবশ্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কোরবানি করলে যে কোনো শরীক ব্যক্তি জবাই করতে পারেন।  অভ্যাস না থাকলে অন্য যে কেউ জবাই করলেও যায়েজ হবে।

ছুরি ডান হাতে অথবা উভয় হাতে ধরা ভালো। কোনোক্রমেই শুধু বাম হাত ব্যবহার করে জবাই করা উচিত নয়। ছুরি চালানোর সময় পশুর গলার মূল তিনটি অঙ্গ কেটে দিতে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে খাদ্যনালী, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শ্বাসনালী, তৃতীয়টি হচ্ছে শ্বাসনালীর দুই পাশে দু’টি রগ রয়েছে সে দু’টি। যদি ঠিকমতো এই অঙ্গগুলো কেটে দেয়া যায়, তাহলে গরু দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এভাবে জবাই করা সুন্নত। 

আমাদের দেশে অনেকেই গরু জবাই করতে গিয়ে ছুরি চালানোর পর ছুরির ধারালো বা সুঁচালো মাথা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন, মেরুদণ্ডের সঙ্গে ঘাড় পর্যন্ত যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে, সেটির রগ কাটার জন্য চেষ্টা করেন। এ ধরনের খোঁচাখুঁচি কোনোক্রমেই উচিত নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এভাবে খোঁচাখুঁচির ফলে পশুটি মৃত্যুর আগেই একবার হার্টফেল করে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উল্লিখিত হাদীসটির মাধ্যমে আমরা যা বুঝি, তা হচ্ছে পশুকে আরামের সঙ্গে জবাই করতে হবে, যাতে সে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কসাই অথবা যারা গরুর গোশত বানানোর জন্য আসে, তারা পশু নড়াচড়া করা অবস্থায় পায়ের রগ কাটা শুরু করে দেয়। এটা করলে পশুকে সুন্নত পন্থায় জবাই করা হয় না। অনেক সময় এ ভাবে জবাই করাকে ‘জবাই করা বলে না’ বরং ‘হত্যা করা বলে’। আল্লাহ আমাদের জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন, হত্যা করতে নয়।

তাই আমরা যারা পশু কোরবানি করি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে আমাদের কোরবানি সম্পূর্ণভাবে সঠিক হয় এবং এর জবাই প্রক্রিয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো সুন্নত মতে হয়।

আল্লাহ আমাদের জেনে-বুঝে নিয়মানুযায়ী কোরবানির পশু জবাই করার তাওফিক দিন। আমিন।
 

ঢাকা/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়