বাতরোগে টমেটো খাওয়া যাবে?
আর্থ্রাইটিস অর্থাৎ বাতরোগ হলে টমেটো না খাওয়ার পরামর্শ অনেকেই দিয়ে থাকেন। কারণ টমোটো নাকি বাতের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? এ অভিযোগ কতটা সত্য? প্রত্যেক বাতরোগীর কি এ সবজি পরিহার করতে হবে? আসুন এ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জেনে নিই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েসে অবস্থিত নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনের ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন ফিজিশিয়ান মেলিন্ডা রিং বলেন, ‘বাতরোগের নিরাময় নেই, তবে প্রদাহ ও উপসর্গ উপশমে ডায়েট বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু খাবার বাতের ব্যথা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বাতরোগী কি খাচ্ছেন বা খাচ্ছেন না তা সকল বাত সমস্যা নির্মূল না করলেও উপসর্গের মাত্রা হ্রাসে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।’
টমেটো ও প্রদাহের মধ্যে কি সত্যিই কোনো যোগসূত্র আছে? সংক্ষেপে উত্তর হলো- না। ডা. রিং বলেন, ‘বাতরোগে ডায়েট থেকে টমেটো বাদ দেয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক উপাত্ত নেই। কোনো গবেষকই বলেননি যে, বাতরোগে সবজিটি খাওয়া উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে, এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে।’ তাহলে বাতরোগ বিষয়ে টমেটো বদনাম পেল কিভাবে?
টমেটো, বেগুন, আলু ও মরিচ হলো নাইটশেড ফ্যামিলির সবজি। এসব সবজি প্রাকৃতিকভাবে সোলানিন নামক বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন করে।দীর্ঘসময় ধারণা করা হতো যে, সোলানিন প্রদাহ ও জয়েন্ট ব্যথা বাড়াতে পারে। কিন্তু এটাকে সমর্থনের জন্য কোনো মেডিক্যাল লিংক বা বৈজ্ঞানিক যোগসূত্র নেই। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণায় দেখা গেছে- টমেটো সিস্টেমিক প্রদাহ কমাতে পারে। সোলানিন মানবদেহে সরাসরি প্রদাহ সৃষ্টি করে না। সোলানিনের আসল কাজ হলো- উদ্ভিদকে প্রাণী ও ক্ষতিকারক ছত্রাক থেকে সুরক্ষা দেয়া।
ডা. রিং বলেন, ‘ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন খাবারের প্রতি ইনটলারেন্স/সেনসিটিভিটি থাকতে পারে এবং কিছু লোকের ক্ষেত্রে টমেটো বাতের উপসর্গকে বাড়াতে পারে। যদি লক্ষ্য করেন যে- টমেটো খাওয়ার পর জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা বা অনমনীয়তা বেড়ে গেছে তাহলে ডায়েট থেকে খাবারটি বাদ দিতে পারেন। যদি কেউ নাইটশেড ক্যাটাগরির খাবারে সমস্যা হয় কিনা দেখতে চান তাহলে দুই সপ্তাহ খাবারটি বাদ দিক। তারপর আবারও ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুক। এতে বাতের উপসর্গের মাত্রায় তারতম্য বোঝা যাবে।’
বাত হলো ক্রনিক প্রদাহজনিত ব্যাধি। যদি কোনো খাবার খাওয়ার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে অ্যালার্জিস্টের কাছে যেতে হবে।টমেটোর মতো নাইটশেড খাবার থেকে তীব্র অ্যালার্জি বা অ্যানাফাইল্যাক্টিক রিয়্যাকশন বিরল। তারপরও সচেতন থাকা ভালো। যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় অথবা গলা ফুলে যায় অথবা গিলতে কঠিন লাগে, তাহলে খাওয়া থামিয়ে দিন ও চিকিৎসকের কাছে চলে যান।
বাতরোগ শনাক্ত হলে ডায়েটে পরিবর্তন আনতে হবে? হ্যাঁ, প্রয়োজন আছে। এ প্রসঙ্গে ডা. রিং বলেন, ‘চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, মাংস, অ্যালকোহল, অ্যাডিটিভ ও গ্লুটেন জাতীয় খাবার বাতের উপসর্গকে তীব্র করে তোলে।’
তবে ভয় পাবেন না। কিছু খাবার বাতের উপসর্গ বাড়ালেও অন্যান্য খাবার খেতে সমস্যা নেই। তাই ডায়েটে আমূল পরিবর্তন আনতে হয় না। কেবল প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী খাবার কমিয়ে ফেলতে হয় এবং শূন্যস্থান পূরণে স্বাস্থ্যকর খাবার সংযোজন করতে হয়। ডা. রিং জানান, ‘বাতরোগীর জন্য খাবার বিষয়ক সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হলো, উদ্ভিজ্জ খাবারকে প্রাধান্য দেয়া, যেমন- মেডিটারেনিয়ান ডায়েট।’
ডা. রিং আরো জানান, ‘কিছু খাবার প্রদাহ প্রশমনেও সহায়তা করতে পারে। যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো বেশ কার্যকর প্রদাহনাশক। ফ্লাক্স বীজ, চিয়া বীজ, তৈলাক্ত মাছ, শাকসবজি ও ফলের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও শরীরের প্রদাহ হ্রাসে ভূমিকা রাখে। এছাড়া হলুদ, আদা, গ্রিন টি ও ফার্মেন্টেড ফুডস অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে, শারীরিক কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং ক্রনিক প্রদাহ কমায়।’
মনে রাখতে হবে- কোনো খাবারের প্রতি প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়া একই রকম নয় এবং খাওয়ার অভ্যাস ব্যক্তিভেদে বেশ স্বতন্ত্র হয়ে থাকে। অনেকেই মজাদার বা সুস্বাদু খাবারকে বাঁকা চোখে দেখেন। ভাবেন যে, সুস্বাদু খাবার মানে শরীরের জন্য খারাপ। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। সুস্বাদু খাবারও শরীরের উপকার করে। আমাদেরকে জানতে হবে, কোন রোগে কোন খাবার এড়াতে বা কমাতে হবে।
/ফিরোজ/