স্ত্রীর রাগ আর অভিমানের পার্থক্য বুঝুন
নতুন বছরে দাম্পত্য সম্পর্কটা নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া দরকার। আর সেজন্য স্ত্রীর রাগকে একমাত্র বাধা মনে করার দরকার নেই। বরং স্ত্রীর রাগকে ‘অভিমান’ নামকরণ করুন। দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখতে রাগকে রাগ বলতে নেই। এতে সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। বুঝলেন তো!
স্ত্রীকে চুপি চুপি এও বলবেন যে- আবেগ ছাড়া মানুষ হয় না, তার আবেগ সুন্দর। কিন্তু অতিরিক্ত আবেগ আপনাদের সম্পর্কের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাহলেই দেখবেন অনেক সমস্যা মূলেই শেষ। আপনার জন্য রইলো আরও কয়েকটি টিপস।
প্রতিটি মানুষ আলাদা। এক একজন মানুষ এক এক ধরনের ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকেন। কথায় কথায় রেগে যাওয়া ব্যক্তিত্বের একটা ধরণ। আপনার স্ত্রী যদি এই ধরনের ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত তার প্রতি অধিক যত্নবান আর মনোযোগী হওয়া। কেননা আপনি তার সঙ্গে জীবনের বাকিটা পথ একসঙ্গে হাঁটবেন বলে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
কথায় কথায় রাগ কেন হয় জানেন? জিনগত কারণে কেউ কেউ একটু চাপে পড়লেই মাত্রাতিরিক্ত রাগ প্রকাশ করে থাকেন। আবার মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, অ্যাংশাস পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রভাবে অতিরিক্ত রাগ হয়ে থাকে। সবকিছু ছাপিয়ে আপনার উচিত তার রাগকে আবেগ মনে করা। তবেই তার আচরণ আপনার কাছে সহনীয় হয়ে উঠবে। কোনো কোনো সমাজে পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি, সংস্কৃতিতে রাগকে স্বাভাবিক আবেগ মনে করা হয়।
আপনার কথার দিকে মনোযোগ দিন: যেসব কথা খুব স্বাভাবিক মনে করছেন, তা হয়তো স্ত্রীর মনে পাহাড়সমান বোঝা চাপাচ্ছে। তাই আপনাকে সবার প্রথমে নিজের মুখ থেকে নিক্ষেপিত শব্দ ভাণ্ডার নিয়ে সচেতন হতে হবে। এরপর বোঝার চেষ্টা করুন, ঠিক কোন কোন শব্দ স্ত্রীকে কষ্ট দিচ্ছে। এরপর থেকে সেই সব কথা আর মুখে আনবেন না। ব্যস।
আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিন: আপনার স্ত্রী খুব রেগে গেলে কৌশলে তার প্রিয় স্মৃতি নিয়ে গল্প শুরু করুন। তার কোনো প্রিয় মানুষ নিয়ে গল্প করতে পারেন। স্ত্রীর ভালোগুণ গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এরপর সময় সুযোগ বুঝে স্ত্রীকে মুখ বন্ধ করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে হবে। আর তাকে বোঝাতে পারেন যে এইসব ছোটখাট বিষয়ে মুখ বন্ধ করে ফেলার সত্যিই কোনো মানে নেই।
স্ত্রী রাগলে আপনি চুপ হয়ে যান: স্ত্রী কথা বলতে না চাইলে আপনিও কিছু সময়ের জন্য চুপ থাকুন। অন্তত সে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে চুপ থাকতে হবে। সব সময় তার মান ভাঙাতে যাওয়ার দরকার নেই। আশা করছি, আপনি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর স্ত্রীর মনে চেতনা জাগবে। তিনি বুঝতে পারবেন যে এভাবে আর আপনাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। আর তারপরই তিনি রাগের খোলোস ছেড়ে বের হয়ে আসবেন।
একটু বেশি ভেবে ফেলছেন না তো: স্ত্রীকে কি পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন? উত্তর যদি হয় না, তাহলে এক কাজের ফল কিন্তু অন্যরকম পাবেন। সোজা বাংলায় বললে- বলতে হবে মনে মনে পুষে রাখা অভিমান যখন তখন রাগ হয়ে প্রকাশ পেতে পারে। আপনি বর হয়েছেন বলে প্রেমিক হতে কেউ নিষেধ করেনি। স্ত্রীকে শুধু স্ত্রী হিসেবে না দেখে প্রেমিকা হিসেবেও দেখুন। তার রাগ, তার অভিমান তখন সবই ভালো লাগবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: কিছু মানসিক রোগ আছে যেমন অপজিশনাল ডেভিয়েন্ট ডিজঅর্ডার, কনডাক্ট ডিজঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, সাইকোসিস, অ্যাজিটেটেড ডিপ্রেশন। এমন যেকোন মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ খিটখিটে স্বভাব হয়ে যেতে পারে। এমনকি তারা নিজের বিরুদ্ধে কোনো কথা শুনলেই রেগে লাল হয়ে যেতে পারেন। আপনার স্ত্রীর রাগের কারণ মানসিক রোগ মনে করলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শুধু তাকে ডাক্তার না দেখিয়ে নিজেকেও দেখাবেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তাকে এনশিওর করবেন যে, আপনারা আপনাদের ভালোর জন্য দুজনই ডাক্তার দেখাবেন বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
সব শেষে এই বলার আছে যে, স্ত্রীর প্রতি রাগ পুষে না রেখে ক্ষমা করতে শিখুন। নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে দূর করার জন্য এই হলো মোক্ষম হাতিয়ার। এরপরেই ইতিবাচক অনুভূতিগুলোর প্রভাব বুঝতে সহজ হবে।
/স্বরলিপি/