ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মেলে বেলালের ঝালমুড়ি

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১০ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৭:২১, ১০ আগস্ট ২০২৪
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মেলে বেলালের ঝালমুড়ি

বেলালের ঝালমুড়ি। ছবি: লেখক

ঝালমুড়ি বাঙালির অতি প্রিয় এক খাবারের নাম। আড্ডা দিতে-দিতে অথবা পথ চলতে-চলতে ঝালমুড়ি খাওয়ার অভ্যাস আছে বাঙালির। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গাতেই ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করার চিত্র হরহামেশা দেখা যায়। কেউ কেউ দোকান দিয়ে বসেন। তাদের মতোই একজন বেলাল আহমেদ। কিন্তু চাইলেই তার ঝালমুড়ি পাওয়া যায় না। বেলালের ঝালমুড়ি খেতে যেতে হয় জিঞ্জিরা ঘাট পার হয়ে শামসুল্লাহর ঘাটে। প্রথমে টোকেন সংগ্রহ করে অপেক্ষা করতে হয়। এরপর সিরিয়াল অনুযায়ী বেলালের ঝালমুড়ি খাওয়ার সুযোগ মেলে।

যারা খেয়েছেন তাদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে বেলারের ঝালমুড়ির সুনাম। অনেকেই বেলালের ঝালমুড়ি খেয়ে এর সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বেলালের ঝালমুড়ি খাওয়ার আশায় ঢাকা থেকে একদিন রওনা দিলাম। বাসে সদরঘাট পৌঁছে নৌকাযোগে জিঞ্জিরা ঘাট পার হয়ে শামসুল্লাহর ঘাট পৌঁছাই। এই পথটুকু পাড়ি দিতে ভাড়া গুনতে হলো ১০০ টাকা। ঘাটে নামার পর কাউকে জিজ্ঞাসা করবো ভাবছিলাম তার আগেই দেখি— বেলালের ঝালমুড়ির দোকান আর মানুষের জটলা। আছরের নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে তাই বেচাবিক্রি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। যারা ঝালমুড়ি খেতে এসেছেন— তারা টোকেন নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।  

বেলালের দোকানে নানা পদের ঝালমুড়ি পাওয়া যায়। নাম অনুযায়ী দামও আলাদা। যেমন— সাধারণ মুড়ি মাখা (৩০), ডিম মুড়ি (৫০), মুরগির পা দিয়ে মুড়ি (৪০), মুরগির গলা দিয়ে মুড়ি (৪০), মুরগির গিলা দিয়ে মুড়ি (৫০), মুরগি ফ্রাই দিয়ে মুড়ি (১০০), গরুর ফেপসা দিয়ে মুড়ি (৫৫), মুরগির কলিজা দিয়ে মুড়ি(৫০), আস্ত মুরগি ফ্রাই দিয়ে মুড়ি (৩৫০)।

আরো পড়ুন:

এছাড়াও বেশ কয়েকটি প্যাকেজ পাওয়া যায়: ৪ জনের পরিমাপের ‘জামাই প্যাকেজ’ যার দাম ৬৫০ টাকা, ২ জনের জন্য প্যাকেজ ৩৫০ টাকা, একজনের জন্য প্যাকেজ ১৮০ টাকা। এছাড়াও যে কেউ চাইলেই কাস্টমাইজ করে অর্ডার দিতে পারবেন। প্রতি পিস চিকেন ফ্রাই ৮০ টাকা, গরুর ফেপসা ২৫ টাকা, মুরগির পা/কলিজা/গিলা ৬-৭ টাকা।

বেলালের ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য প্রথমে টোকেন সংগ্রহ করি। এরপর নদীর পারে বসে দেখতে থাকি মনোরোম প্রকৃতি। এদিকে সিরিয়াল যেন শেষই হচ্ছে না। অবশেষে টোকেন নম্বর ধরে ডাক পড়লো।অর্ডার দেওয়ার সুযোগ পেলাম। দুইজনের জন্য প্যাকেজের ঝালমুড়ি নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ঝালমুড়ি বানিয়ে দিলেন বেলাল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ। জানতে পারলাম বেলাল আহমেদ গিয়েছেন চিল্লায় তাই এখন দোকানের দেখভাল করছেন তার ছেলে এবং কর্মচারীরা।

বেলালের দোকানের ভেতরে বসে অথবা খোলা আকাশের নিচে চেয়ার টেবিলে বসে নদী দেখতে দেখতে ঝালমুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। বেশিরভাগ লোকেই নদীর মনোরোম দৃশ্য দেখতে দেখতে ঝালমুড়ি খান।

দারুণ স্বাদের ঝালমুড়ি খেলাম। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ দুইই বেশ ভালো লাগলো।বেলালের দোকানে ব্যবস্থা রয়েছে সাধারণ পানি এবং বোতলজাত পানীয় এবং কোমল পানীয়ের। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে বেলালের মুড়ির দোকান।

ঝালমুড়ি খেতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো। তরিকুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ঝালমুড়ি বেশ ভালো তবে পরিমাণে কম মনে হলো। অনেক জায়গায় মুড়ি খেয়েছি কিন্তু এদের খাবারটা ভিন্ন।

পরিবার নিয়ে বেড়িবাঁধ থেকে বেলালের ঝালমুড়ি খেতে আসা হারুন আহমেদ বলেন, সবাইকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মুড়ি খেতে এলাম। জায়গাটা বেশ ভালো লেগেছে, খাবারও বেশ ভালো।

বেলাল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের এখানে আল্লাহর রহমতে ভালো বিক্রি হয়, নামাজের সময় দোকানে বিক্রি বন্ধ থাকে।

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়