ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ভিপিএন কী নিরাপদ?

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:০৬, ২৭ জুলাই ২০২৪
ভিপিএন কী নিরাপদ?

সম্পূর্ণ ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার না করাই ভালো।

অনেকে মনে করেন ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফলে তথ্য চুরি হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন এসব অ্যাপস ব্যবহার করলে হ্যাকাররা ফোনে বা পিসিতে অ্যাক্সেস পেতে পারে। তবে আসলেই কী তাই?

এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা হয় জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন মাহমুদের সাথে।

শাওন বলেন, ‘ডিজিটাল জগতে অনলাইনে প্রাইভেসি সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাড়ানো ও অপ্রবেশ্য কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ টুল হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন। বিশ্বব্যাপী এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। তবে ভিপিএন ব্যবহারের আগে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।’
‘ ধরুন একটা শহরের নানা প্রান্ত বেশ কয়েকটি টানেল দিয়ে সংযুক্ত। গাড়ি টানেলে প্রবেশ করার পর কোন পথ ধরে কোন প্রান্তে যাচ্ছে— তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। আপনি শুধু গাড়িকে ঢুকতে আর বের হতে দেখবেন। ভিপিএনটাও এইরকম’-যোগ করেন শাওন মাহমুদ।

ভিপিএন ব্যবহার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ভিপিএন ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ইউজারের ইন্টারনেট কানেকশন এনক্রিপশন। অর্থাৎ আপনার সমস্ত তথ্য এমন একটা কোডে রূপান্তরিত হবে, যা বিশেষ অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ডিক্রিপ্ট করে দেখতে পাবে না। এতে হ্যাকার, সরকারি সংস্থা এমনকি আইএসপি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারও আপনার তথ্য মনিটর করতে পারবে না। তাছাড়া ভিপিএনের সহায়তায় আপনার পরিচয় থাকবে অ্যানোনিমাস বা অজ্ঞাত। ফলে আপনার ভৌগলিক অবস্থান ও আইপি অ্যাড্রেস গোপন থাকবে। এতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপনদাতা এবং অনলাইন ট্র্যাকারের পক্ষেও আপনার অনলাইন গতিবিধি নজরদারি করা কঠিন হয়ে পড়বে। ঠিক ওই টানেলের মতো। ভিপিএন ব্যবহার করে দুর্গম জায়গা থেকে কর্পোরেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সম্ভব। তাছাড়া ভিপিএন ‘ম্যান ইন দ্য মিডল’, ‘ডিএনএস স্পুফিং’ টাইপের সাইবার হুমকি থেকেও সুরক্ষা দেয়।

ভিপিএন কি পুরোপুরি নিরাপদ? এবিষয়ে শাওন বলেন,  ‘আগেই বলেছি ভিপিএন ব্যবহার করলে আইএসপি আপনার তথ্য মনিটর করতে পারবে না। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে আপনার তথ্য চেয়ে নিতে পারবে। এটা নির্ভর করবে ভিপিএন প্রভাইডার তথ্য শেয়ার করতে ইচ্ছুক কি না— তার উপর। বাজারে প্রচুর ভিপিএন টুল রয়েছে। তিক্ত হলেও সত্য অসংখ্য ভিপিএন অ্যাপ তৈরিই করা হয়েছে ইউজারের তথ্য চুরি করে তা দিয়ে ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটানোর জন্য। ২০১৯ সালে গুগল প্লে স্টোরের ১৫০টি জনপ্রিয় ভিপিএনের ২৫ শতাংশের বেশি অ্যাপের বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে যেসব ভিপিএন অ্যাপ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়, সেগুলো থেকে বেশি তথ্য পাচার হচ্ছে। তাছাড়া ভিপিএন সার্ভার সস্তা বা দুর্বল হলে তা সহজেই হ্যাকারের হাতে চলে যেতে পারে। ভিপিএন অ্যাপ হতে পারে হ্যাকার আর আপনার মধ্যে একটা ব্রিজ। বিশেষ করে ফ্রি ভিপিএনের আইপি সহজেই হ্যাক করা সম্ভব।’

শাওনের পরামর্শ—
ভিপিএন ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া বা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট ব্রাউজ করলে তারা আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দিতে পারে। ভিপিএন বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মধ্য দিয়ে ডেটা পাঠায়। যা ইন্টারনেট স্পিড কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে এমন সার্ভারের বেলায়, যেগুলোর অবস্থান ব্যবহারকারীর অবস্থান থেকে অনেক দূরে। ভিপিএন একটি দরকারি টুল। তবে সম্পূর্ণ ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার না করাই ভালো। পয়সা গুণতে হলেও প্রিমিয়াম ভিপিএন টুল ব্যবহার করার বিকল্প নেই। ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করলেও অবশ্যই ভালো কোম্পানির ভিপিএন ব্যবহার করার পরামর্শ থাকবে।

/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়