ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

ইলিশ কখন খাওয়া ভালো?

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ইলিশ কখন খাওয়া ভালো?

ছবি: প্রতীকী

সব অঞ্চলের ইলিশের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ এক নয়। তারপরেও মাছের রাজা ইলিশ। নামেই শুধু রাজা নয় কাজেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। বর্ষা আর শরৎকালে সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। কথা হচ্ছে, ইলিশ কখন খাওয়া ভালো এবং ইলিশে কি কি খাদ্য উপাদান আছে? এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার সুমি রাইজিংবিডিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

এই পুষ্টিবিদ ইলিশের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের থেকে প্রাপ্ত ইলিশ মাছের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছ থেকে আমরা প্রায় ৩১০ ক্যালরি পেয়ে থাকি, আমিষ পাই ২২ গ্রাম। চর্বি পাই ২০ গ্রাম। ইলিশ মাছের মধ্যে চর্বির ধরন এবং অনুপাত মোটামুটি এমন— Saturated  (৪৪-৪৭)%,   MUFA ( mono unsaturated  fatty acid) ( ৩২-৩৬)%,  PUFA( poly unsaturated  fatty acid) (১৬-২২)%, PUFA- এর মধ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যেমন (EPA, DHA) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।ভিটামিনগুলোর মধ্যে— ভিটামিন এ, ডি, কে, সি, বি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। আর খনিজ লবণের মধ্যে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক,পটাসিয়াম, ফসফরাস,  ক্যালসিয়াম  ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।’

ইলিশের উপকারিতা সম্পর্কে জাহানারা আক্তার সুমি যা জানিয়েছেন

হার্ট এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ইলিশে বিভিন্ন অনুপাতে যেসব চর্বি রয়েছে ইলিশে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওমেগা ৩। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে (EPA, DHA) যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে যা গবেষণায় প্রমাণিত।  রক্তের মধ্যে যেসব চর্বি রয়েছে তার মধ্যে ক্ষতিকর নিম্ন ঘনত্বের লাইপো প্রোটিনকে  (LDL)  হ্রাস করা এবং উচ্চ ঘনত্বের লাইপো প্রোটিন (HDL) বাড়াতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়া ট্রাই গ্লিসারাইড (TG) কমাতেও ভূমিকা রাখে এর  ফলে  রক্তের চর্বিগুলোর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে এবং রক্তনালির রোগ এথেরোস্ক্লেরোসিস সহ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

মস্তিষ্কের কার্যক্রম বাড়ায়: এখানেও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে (DHA)  যা কিনা মস্তিষ্কের কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা স্নায়ুর কার্যক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি  বাড়াতে সাহায্য করে। ছোটদের যেমন পড়াশোনাসহ মনযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেমনি বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের যে রোগগুলো হয় সেগুলোও প্রতিরোধ করে। মানসিক অবসাদ মুড সুইং ডিসঅর্ডার থেকেও সুরক্ষা দেয় ইলিশ মাছ।

চোখের কার্যক্রম ভালো রাখে: ভিটামিন এ আর ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড  চোখের সুরক্ষায় কাজ করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে এই উপাদানগুলো বিশেষ করে ভিটামিনের অভাবে রাতকানাসহ অন্যান্য চোখের সমস্যাগুলো তরান্বিত হতে পারে। চোখের রেটিনাতে ওমেগা ৩  বিশেষ করে DHA উচ্চ ঘনত্বে থাকে যা মূলত দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে বা বয়সজনিত চোখের রোগগুলো প্রতিরোধ করে থাকে।

হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে: ক্যালসিয়াম ফসফরাস হাড়কে মজবুত রাখতে ভূমিকা পালন করে। এইসব খনিজ উপাদান হাড়ের মিনারেলাইজেশনকে ঠিক রাখে যা কিনা বয়সের সাথে সাথে হাড়ের বিভিন্ন ক্ষতি বা অস্টিওপরোসির মতো রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

এ ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ইলিশের পুষ্টি উপাদানগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রেসতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে এই পুষ্টিবিদ বলেন, ‘যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি বা কিডনি রোগ আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইলিশ খেতে হবে।

এ ছাড়াও ছোট-বড় সুস্থ সবার জন্য ইলিশ মাছ  প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। শুধু আনন্দে উৎসবে ইলিশ মাছকে খাদ্য তালিকায় না রেখে আমরা যেকোন সময় আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ইলিশ রাখতে পারি।’- যোগ করেন জাহানারা আক্তার সুমি।

লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়