ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

মানুষ যেসব কারণে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৩ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১২:০৩, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
মানুষ যেসব কারণে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়

ছবি: সংগৃহীত

পছন্দের মানুষের সামনে গেলে আপনি হয়তো সাধারণ কোনো কথাবার্তাও চালিয়ে নিতে পারেন না, সবকিছু জড়িয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি অনেক সময় এমন ব্যক্তির প্রতি হয় যা হয়তো আমরা কখনো কল্পনাই করি না। যেমন আপনি হয়তো বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন আর তখন যে ব্যক্তি আপনাকে সরিয়ে চলে গেল তাকেই আপনার এত ভালো লাগতে পারে যে আপনি হয়তো তাকে আর ভুলতেই পারছেন না, তার  কথাই ভেবে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কেন কোনো বিশেষ মানুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি,  তার মধ্যে এমন কী রয়েছে যা আমাদেরকে তাদের প্রতি আকর্ষিত করে। 

মনোবিজ্ঞানীরা এমন সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন-এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর ক্লিয়ার হার্ট সাইকোলজি অ্যাট্রাকশন বিষয়টি পড়িয়ে থাকেন। তিনি মনে করেন যে কারও প্রতি আকর্ষণ বোধের পাঁচটি কারণ রয়েছে। আসুন জেনে নেই সেগুলি।

১) নৈকট্য: এই মনোবিদের মতে কারো প্রতি আকর্ষণ বোধ করার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নৈকট্য। ডক্টর হার্টের ভাষায় উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে এবং তারা যাদেরকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে উল্লেখ করে থাকে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে তাদের মধ্যে নৈকট্য রয়েছে। অর্থাৎ তারা পরস্পরের কাছাকাছি থাকে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে নৈকট্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের কাছাকাছি গেলে আমরা বুঝতে পারি যে তাদের সাথে আমাদের সাদৃশ্য রয়েছে আমরা শারীরিকভাবে তাদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। উদাহরণস্বরূপ কোন সিনেমা মুক্তির পর সেখানকার অভিনেতা অভিনেত্রীর প্রেমের গুঞ্জন এর কথা কিংবা সহকর্মী কিংবা সহপাঠীর প্রতি আকর্ষণ কিংবা প্রেমের কথা তো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তবে ডেটিং অ্যাপস এই ধারণাগুলোকে পাল্টে দিচ্ছে। বর্তমানে সঙ্গী বেছে নেওয়ার জন্যে মানুষের শত শত বিকল্প রয়েছে। প্রফেসর হার্ট মনে করেন অনেক বেশি বিকল্প হাতে থাকাটা একটা সমস্যা হতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে বেছে নিতে সমস্যা হয়।

২)সাদৃশ্য: এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই মনে করেন, বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষই আমাদেরকে বেশি আকর্ষণ করে। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে ঠিক নয়। এর পরিবর্তে যাদের সাথে আমাদের সাদৃশ্যগত মিল থাকে তাদের প্রতি আমরা বেশি আকর্ষণ বোধ করি। যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা একজন মনোবিজ্ঞানী ডোন্ট বার্ন  এ বিষয়টি বুঝতে একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন যার নাম দিয়েছিলেন ফ্যান্টোম স্ট্রেঞ্জার টেকনিক। এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের অভিব্যক্তি জানতে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে দেওয়া হয়। পরের ধাপে তাদের সেই প্রশ্নপত্রের উত্তরের ভিত্তিতে কোনো একজন মানুষকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়। এতে দেখা গেছে যে এই অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করেছেন যাদের সাথে তাদের নিজস্ব অভিব্যক্তি বা মতের মিল রয়েছে। এই মিল থাকার বিষয়টি যত বেশি পছন্দ কিংবা আকর্ষণ করার ক্ষমতাও তত বেশি। সহজ ভাবে বলতে গেলে কারো সাথে যদি আপনার পছন্দ বা অপছন্দ মিলে যায় তাহলে তার প্রতি আকর্ষণ বোধ কাজ করতে পারে। অনেকেই মনে করেন, এই আকর্ষণ বোধ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।

৩)পারস্পরিক যোগাযোগ: আমরা সেইসব মানুষদেরকেই পছন্দ করি যারা আমাদেরকে পছন্দ করে। আমাদেরকে পছন্দ করো না এমন মানুষের প্রতি আমরা খুব সহজে আকর্ষণ বোধ করি না।

৪)শারীরিক সৌন্দর্য: বিশেষজ্ঞরা বলছেন আমরা স্বীকার করি আর নাই করি, জৈবিকভাবে আমরা সেইসব মানুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি যারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং যাদেরকে প্রজননের জন্য উপযোগী বলে আমরা মনে করি। বলা হয় যে মুখমণ্ডলের আকার গঠন এবং নিতম্ব ও কাধের মাপের অনুপাত এসবই মানুষের প্রতি পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শারীরিক এই বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্বাস্থ্যের প্রতীক। 

ক্লেইন স্টেট ইউনিভার্সিটি মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড সিলেস্টি ওয়েলি জিন বলেন, সাধারণত পুরুষরা বয়সে ছোট নারীদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন শারীরিকভাবে যারা গর্ভধারণের উপযোগী।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হরমোনের নিঃসরণও অনেক সময় আকর্ষণ বোধে ভূমিকা পালন করে। ওইসব গবেষণায় পাওয়া যায়— যেসব পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বেশি হয় তারা এমন নারীদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন যাদের মুখমন্ডলের নারীত্বের কোমলতা ভাব বেশি থাকে। যেমন বড় চোখ, ছোট চোয়াল। তবে হরমোনই একমাত্র মাপকাঠি নয়। মনোবিজ্ঞানে এই বিষয়গুলো এখনো বেশ গোলমেলে।

৫)পরিচিত: যারা আমাদের ঘনিষ্ঠ  যাদের কাছে আমরা স্বস্তির অনুভূতি পাই তাদের প্রতি আমরা আকর্ষিত হই। মনোবিজ্ঞানী হার্ট বিবিসি বাইট সাইজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা আমাদের বিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট। যাদের প্রতি আমরা স্বস্তি বোধ করি তাদের প্রতি আকর্ষণও বোধ করি কারণ স্বস্তি সম্পর্কে নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়।’’

এই ঘনিষ্ঠতাবাদের তত্ত্বকে অনেক সময় বলা হয় ছাপ ফেলা বা ইমপ্রিন্টিং। এই বিষয়টিকে ইউনিভার্সিটি অফ সোয়ানসিয়ার শিক্ষক এলেক্স জোন্স প্রাণিজগতের উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, যখন কোন প্রাণী তুলনামূলক তরুণ থাকে তখন তাদের মধ্যে  সেক্সচুয়াল ইমপ্রিন্টিং এর বিষয়টি কাজ করে। 

ধরুন, কারো সাথে আপনার প্রতিদিন দেখা হয়। তাহলে সম্ভাবনা থাকে যে সময়ের সাথে সাথে আপনি তার সান্নিধ্যে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন এবং একটা সময় গিয়ে আপনি তাকে মিস করতে থাকবেন। তবে এর উল্টোটাও হতে পারে বলে মনে করেন ডক্টর হার্ট। তিনি বলেন, কারো কাছাকাছি থাকার মানে এই নয় যে সব সময় তাকে আপনি পছন্দ করবেন। কারণ আপনার প্রথম ইমপ্রেশন বা প্রথম অভিজ্ঞতা যদি খারাপ হয় তাহলে, কাছাকাছি থাকলেই সেই সমস্যার কোন সমাধান হয়ে যাবে সেটি নয়।

ঢাকা/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়