ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার: পিআইবি মহাপরিচালক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ১৪ মে ২০২৪  
গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার: পিআইবি মহাপরিচালক

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেছেন, গুজব প্রতিরোধে প্রথমত সচেতনতা দরকার। কারণ সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয় সামাজিক মাধ্যমসমূহে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অসম্পাদিত মাধ্যম। একে সংবাদ মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই গুজব প্রতিরোধে সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণে শিশুদের সুকুমারবৃত্তি প্রস্ফুটিত হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পত্রিকাসমূহ ফ্যাক্টচেক বিষয়টি সম্পর্কে এখনও তেমন একটা অবগত নয়।

মঙ্গলবার (১৪ মে) পিআইবি’র সেমিনার কক্ষে ‘গুজব প্রতিরোধে প্রচারাভিযান: তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ উপকরণ পর্যালোচনা বাংলাদেশের তিন জেলায় পরিচালিত গবেষণার তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) ও পিআইবির যৌথ আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।  

গোলটেবিল আলোচনায় সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনশীল। বর্তমান সময়ের মতো ফেক নিউজ, মিস ইনফরমেশন, ম্যাল ইনফরমেশনের মতো শব্দ নতুন সংযোজিত হলেও পূর্বেই সেটা ভিন্ন নামে- যেমন তথ্য ও অপতথ্য নামে পরিচিতি ছিল। তিনি সংবাদ বলতে অনেকগুলো তথ্যের সমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে গুজব রটানোর কিছু বাস্তব তথ্য উপস্থাপন করেন।

সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড)-এর অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক সৈয়দ কামরুল হাসান আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, গুজব প্রতিরোধে মাল্টিস্টেক হোল্ডার সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় সমাজে মানুষের ব্যবহার পরিবর্তন হয়ে যাবে।

সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড)-এর কনসালটেন্ট ড. শেখ শফিউল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, সরকারের পাশাপাশি সাকমিডের মত কয়েকটি দায়িত্বশীল সংস্থা যেমন তথ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, পিআইবি সমাজের নানা স্তরে গুজব প্রতিরোধের জন্য জন-অংশগ্রহণমূলক নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। কয়েকটি দাতা সংস্থাও এ ব্যাপারে তাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে।

গোলটেবিলে পিআইবি’র সহকারী প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দীন বলেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমসমূহ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে। সেখানে সেভাবে কন্টেন্ট সরবরাহ করে। তাছাড়া মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক আলোচনা করে বলেন, মানুষ একটি ইতিবাচক দিক শুনতে কিংবা দেখতে চাইলে অন্ততপক্ষে ১৭টি নেতিবাচক বিষয় শুনতে বা দেখতে চাই।

বুম বাংলাদেশের সম্পাদক আমির শাকির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার ও তার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের পার্থক্য তুলে ধরেন। কীভাবে তথ্যকে বাছাই করা, এক কথায় ফিল্টারিং করা যায় সেটা নিয়ে আলোকপাত করেন।

ফেসবুক বাংলাদেশের মুখপাত্র শুভাশিস দ্বীপ বলেন, গুজব প্রতিরোধে আমাদের সবচেয়ে বেশি করা উচিৎ গ্রামীণ এলাকায়। কারণ সেখানে সবচেয়ে গুজব ডালপালা মেলে ধরে।

গোলটেবিল বৈঠকে তিনটি জেলার ওপর চালানো জরিপের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন মাহবুবা আহমেদ রোজি। তিনি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সংখ্যা, ব্যবহারের পদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয় তুলে ধরেন।

আলোচনায় রিউমার স্ক্যামের সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ বা গ্লোবাল মিডিয়া মনিটরিং ১৯৯৫ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। যদিও বাংলাদেশে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ খুব একটা ফলপ্রসূ নয়, তারপরও কিছু নীতিমালার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপনে পাঠক, দর্শক বা শ্রোতাকে যেমন জেন্ডার সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে, তেমনি নতুন কিছু ইতিবাচক ধারণাও সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া তিনি টিকটকের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন।

উল্লেখ্য, সাকমিড সম্প্রতি দেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোট ৪০০ জনের ওপর জরিপ, ৩০ জনের নিবিড় সাক্ষাৎকার ও ৬টি দলগত আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন করছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য, অপতথ্য এবং কীভাবে গুজব ছড়ায়, কারা গুজব ছড়ায়, কী ধরনের গুজব ছড়ায় এবং এসব থেকে পরিত্রাণের বিষয়ে সাকমিড কাজ করবে। সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে গণমাধ্যম সাক্ষরতা বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানান উন্নয়নমূলক কর্মসূচি সম্পাদন করেছে। গোলটেবিলে সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, আইনজীবী, মসজিদের ইমাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৩৪ জন অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়