ঢাকা     বুধবার   ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ১৮ ১৪৩১

ভালো সাংবাদিকতার জন্য কনটেন্ট চুরি ঠেকাতে হবে: প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২০:১৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ভালো সাংবাদিকতার জন্য কনটেন্ট চুরি ঠেকাতে হবে: প্রেস সচিব

রাইজিংবিডির ত্রৈমাসিক পুরস্কার বিতরণী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম

ভালো সাংবাদিকতার জন্য কনটেন্ট বা নিউজ চুরি ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমের উচিত কনটেন্ট চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনে আলাদা সফটওয়্যার বা টুলস ব্যবহার করা।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মিরপুর-১ এর মাজার রোডে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের নিজস্ব কার্যালয়ে ত্রৈমাসিক পুরস্কার বিতরণী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

শফিকুল আলম বলেন, “একটি ভালো খবর তৈরি করতে অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করতে হয়, ভালো বেতন দিয়ে দক্ষ সাংবাদিক রাখতে হয়। অথচ দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে একটি কনটেন্ট তৈরি করে সেই সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করামাত্রই চুরি হয়ে যায়; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সেটি এদিক-সেদিক করে প্রকাশ করে দেয়।”

আরো পড়ুন:

“মামা-ভাগ্নে ডটকম টাইপের নিউজ পোর্টাল এমন কাজ করে থাকে। তাদের না আছে বিনিয়োগ, না আছে সাংবাদিক। অথচ অন্যের ভালো খবর ছেপে বলে তারা বেড়ায়, দেখেছেন ওই খবরটি আমরা দিয়েছি।”

শফিকুল আলম বলেছেন, “এই চুরি ঠেকাতে হবে। সব ‘চুরি ডটকম’ ঠেকাতে হবে। এদের জন্য সাংবাদিকরা ভালো বেতন পাচ্ছেন না; তাদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।”

“একটা বিষয় নিয়ে বারবার বলছি, সেটা হলো কনটেন্ট প্রটেকশন। আমরা চাই, আপনি যে কনটেন্টটা করলেন সেটা যেন প্রটেকটেড থাকে। সেটা যেন তাৎক্ষণিক আরেকটা বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-ভাতিজা বা মামা-ভাগ্নে ডটকম টাইপের যে ওয়েবসাইট রয়েছে, তারা যেন এই কনটেন্টটা চুরি না করে।”

এ ধরনের ওয়েবসাইটের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, “পারলে তাদের মতো করে তারা একটা নিউজ করুক। কিন্তু আপনি যে কনটেন্টা করলেন, একজন রিপোর্টারের পেছনে ইনভেস্ট করলেন, সেই ইনভেস্ট করে যে রিপোর্টটা করলেন, সেটা যেন প্রটেক্টেড থাকে।”

“আপনার অরিজিনাল কনটেন্টটা অটুট থাকুক। কনটেন্ট চুরি করে ‘ঢাকা চুরি ডটকম’ ধরনের পোর্টাল তা প্রকাশ করে দিচ্ছে-এটা তো খুব ভয়াবহ জিনিস। এটার ফলে হচ্ছে কী? জার্নালিস্টরা ভালো বেতন পাচ্ছে না।”

প্রেস সচিব বলেন, “জার্নালিস্টের কনটেন্ট প্রটেক্ট করা যে খুব কঠিন একটা কাজ, তাকে যে আমার দাম দিতে হবে, তার যে একটা ভ্যালু আছে-তা সে পাচ্ছে না। আমি চুরিকে অ্যালাউ করছি।”

“সবাইকে বলেছি, এটা (কনটেন্ট প্রটেকশন) নিয়ে সোচ্চার হোন। জার্নালিজম ইজ অ্যা এক্সপেনসিভ থিং। এটার কস্ট আছে। আমি একটা জার্নালিস্ট নিলাম ৫ হাজার টাকা দিয়ে; নিয়ে সারা দিন ভরে চুরি করলাম। এই জার্নালিজম আমরা চাই না। এদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে।” 

কীভাবে কনটেন্ট বা নিউজ চুরি ঠেকানো যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা চাই, আপনারা পারলে একটা সফটওয়্যার বা অ্যাপ ডেভেলপ করুন। দেখেন, আপনার রিপোর্টটা হওয়ার পরপর কারা আপনার নিউজ বা ছবিগুলো চুরি করছে।

গণমাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান রেখে তিনি বলেন, “আপনারা ফটোতে (ছবি) ইনভেস্ট করেন। না হলে সামনে বিপদে পড়বেন। আপনি হয়তোবা নিজের অজান্তে একটা ছবি দিয়ে দিচ্ছেন, ভাবতেছেন কেউ দেখছে না। এই ছবিটা তো কেউ একজন তুলেছেন। ওই ছবিটা হয়তো সেই শুধু পেয়েছে। ওটা তার কপিরাইটের বিষয়। তার সম্মানের বিষয়। ওটা চুরি করে আমি দিয়ে দিচ্ছি। এটা খুব বাজে জিনিস।”

কনটেন্ট চুরি রুখে দিয়ে ভালো সাংবাদিকতার আহ্বান রেখে শফিকুল আলম বলেন, “জার্নালিজমকে দাম দিতে হবে। কনটেন্টের দাম দিতে হবে। কারা কারা কনটেন্ট চুরি করে বের করুন। আমাদের এটা জানা দরকার। তাদের কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিকরা ভালো বেতন পাচ্ছে না। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ফাইন্যান্সিয়াল মডেল হচ্ছে না। যারা অরিজিনাল কনটেন্ট করবেন, তাদেরকে বাংলাদেশে প্রটেকশন দরকার। 

কনটেন্ট প্রটেকশনের বিষয়ে সব সংবাদমাধ্যমকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “ব্যাঙের ছাতার মতো সামান্য টাকা দিয়ে পোর্টাল করবেন, করে চুরি করবেন- এটা হতে পারে না। বাংলাদেশে জার্নালিজমের র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ আনতে হবে।”

জার্নালিজমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, “আমাদের সরকার কী বিশ্বাস করে, সেটি  গত পাঁচ মাসে আমরা বলেছি। আমরা জার্নালিজমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। সে অনুযায়ী যতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি।”

“বাংলাদেশে গত পাঁচ মাসে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করছে, গত পাঁচ দশকে এটা ছিল না। এটা খুব গর্বের সাথে, কনফিডেন্সের সাথে বলছি। কেন বলছি, সেটি আপনারা দেখেছেন। গত পাঁচ মাসে রিপোর্ট করেছেন; কোথাও থেকে কেউ ফোন দিয়ে বলেছে যে, এই নিউজটা নামাও বা এই নিউজটা করো না বা এই নিউজটা করো। এই ধরনের কি নির্দেশনা এসছে? আমার মনে হয় না। আপনাদের পথের মধ্যে ব্যারিয়ার দিয়েছে যে, এই রিপোর্টটা করতে পারবেন না- আমার মনে হয় না।

মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা সত্যিকার অর্থে চাচ্ছি ইন্টেরিম টাইমে আমরা আসছি, সেই টাইমে একটা পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট যেটা স্বৈরাচার হয়ে গিয়েছিল; সেটাকে আউস্ট (উৎখাত) করেছে বাংলাদেশের মানুষ, রেভ্যুলিউশনারি বা বিপ্লবীরা। তাদের একটা ম্যান্ডেড নিয়ে এখানে এসছি। আমরা চাই এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে মিডিয়ার ফ্রিডম যেটা হারিয়ে গিয়েছিল, সেটা যেন ভালোভাবে ফিরে আসে।”

“আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যারিয়ার করা হচ্ছে না। আগে প্রেসের মুখটা বন্ধ করত, তার ভয়েসটাকে স্তব্ধ করত, সেটা করত গভর্নমেন্ট আর গভর্নমেন্টের ইনটেলিজেন্স এজেন্সি, তার হর্তাকর্তারা।”

‘মিডিয়ায় ইনভেস্ট করুক এবং নির্ভয়ে থাকুন’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “১৯৯০ সালের পর যখন মিডিয়া ডিরেভ্যুলিউশন হলো, অনেক পত্রিকা আসতে দেখেছি; দেখেছি অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান পত্রিকা বা ওয়েবসাইট দিয়েছে। তারা সেটি করেছে তাদের বিজনেস ইন্টারেস্টটাকে প্রটেক্ট করার জন্য। এর মূল কারণ ছিল- তারা বলত এটা থাকুক; হয়তো কিছু টাকা খরচ হবে। বাট আমার বড় যেটা পাঁচ হাজার কোটি টাকার ইন্ডাস্ট্রি সেটাকে আমি প্রটেক্ট দেব এটাকে ইউজ করে।

“আমার মনে হয় এই মডেলটা এখন ব্রোকেন, আর দরকার নাই। আমরা চাই, বড় করপোরেট হোক, ছোট করপোরেট হক; তারা ইনভেস্ট করুক এবং নির্ভয়ে থাকুক। আপনি যদি ভালো জার্নালিজম করেন, রাইজিংবিডি যদি ভালো জার্নালিজম করে তাহলে তো সমস্যা নেই।”

শফিকুল আলম বলেন, “আমাকে বা পাওয়ারফুল ব্যক্তিকে অ্যাকাউন্টেবল করার জন্য কোনো গভর্নমেন্ট যেন সংবাদমাধ্যমের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে না ধরে; এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আপনি একটা নিউজ পেপার দিলেন, তার ক্রিটিক্যাল রিপোর্টের কারণে তার মাদার কোম্পানিকে গভর্নমেন্ট যেন হ্যারেজমেন্ট না করে, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই।”

ত্রৈমাসিক পুরস্কার বিতরণী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক উজ্জ্বল, রাইজিংবিডির প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান, রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়, স্কাইরুট মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম মিল্টন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা,  রাইজিংবিডির বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজ, প্রধান প্রতিবেদক হাসান মাহমুদ, সহকারী বার্তা সম্পাদক সাইফ বরকতুল্লাহ, মফস্বল সম্পাদক ইবনুল কাইয়ুম সনিসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা অংশ নেন।

সংবর্ধনা ও পুরস্কারপ্রাপ্তরা
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস)) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় রাইজিংবিডি ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহাত সাইফুলকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

রাইজিংবিডি ডকটমের বিভিন্ন বিভাগের কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ত্রৈমাসিক সেরার পুরস্কার পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ছয় সংবাদকর্মী।

সেরা প্রতিবেদনের পুরস্কার পেয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক কেএমএ হাসনাত ও নিজস্ব প্রতিবেদক (স্পোর্টস) মো. সাইফুল ইসলাম রিয়াদ। মতামত বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন প্রধান প্রতিবেদক হাসান মাহমুদ। সম্পাদনা বিভাগে সিনিয়র সাব-এডিটর ও শিফট-ইনচার্জ তানজিনা আফরিন ইভা,  মাল্টিমিডিয়া বিভাগে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন ইয়াসমিন আক্তার সুমি এবং মফস্বল থেকে পুরষ্কার পেয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি কাঞ্চন কুমার।

ঢাকা/মামুন/সাইফ/রাসেল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়