ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৯ ১৪৩১

হেলমেটের মেয়াদ কত দিন?

মটো কর্নার ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩  
হেলমেটের মেয়াদ কত দিন?

হেলমেটের কি কোনো জীবনকাল আছে? কিংবা ধরুন, জীবনে একবার হেলমেট কেনার পর এর কি আর পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাবে অনেকেই হয়তো বলবেন, আরে ভাই, হেলমেটের আবার জীবনকাল কী? কেউবা হয়তো বলবেন, আমার ১০ বছর আগের হেলমেট এখনও চকচক করে, এর আবার কী পরিবর্তন করব?

এই ভাবনাগুলো যাদের, তাদের বলছি- যে কোনো পণ্যের মতো হেলমেটেরও জীবনকাল আছে। আর আপনার পুরোনো হেলমেটটি যতোই চকচক করুক না কেন, এর ভেতরের উপাদানগুলো যদি নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনার হেলমেটটিও বাতিলের খাতায় রয়েছে।

হেলমেটের জন্য উচ্চমানের নিরাপত্তা সার্টিফিকেট প্রদানকারী অলাভজনক সংস্থা স্নেল মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের মতে, কেনার পর একটি হেলমেট পাঁচ বছর পর্যন্ত  ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, উৎপাদনের তারিখ থেকে সাত বছর পর্যন্ত একটি হেলমেটের জীবনকাল বিবেচনা করা উচিত।

আরো পড়ুন:

হেলমেট তৈরিতে ব্যবহৃত বাইরের শেল এবং লাইনার সামগ্রী সময়ের সাথে সাথে ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তদুপরি হেলমেটটি যে পরিমাণ ব্যবহার করা হয় এবং এটি কোথায় ও কীভাবে রাখা হয় তার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে এসব সামগ্রীর আয়ুষ্কাল।

কেন হেলমেট চিরকাল স্থায়ী হয় না তা বোঝার জন্য নিচের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত-

ইপিএস লাইনার

ইপিএস হল অভ্যন্তরীণ লাইনারের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত উপাদান। হেলমেটের গঠনের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি। দুর্ঘটনার সময় হেলমেটের বহিরাংশের পর মূল ধাক্কাটি সামাল দেয় এই ইপিএস লাইনার। এটি বাইরের শেল এবং ভিতরের প্যাডিংয়ের মধ্যবর্তী স্তর। এটি হেলমেট থেকে অপসারণযোগ্য নয় এবং প্রতিস্থাপন করা যায় না।

ইপিএস লাইনারগুলি হেলমেটের অন্য কোনও উপাদানের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্থ কিনা তা জানা কঠিন। তবে দুর্ঘটনার সময় হেলমেটের ওপর আঘাতের কারণে বাইকার যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কিংবা চোখে ধোঁয়াশা দেখেন তাহলে বুঝতে হবে ইপিএস লাইনার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে এই হেলমটটিকে বাতিলের কাতারে ফেলে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আউটার শেল

হেলমেটের বাইরের অংশ বা আউটার শেলটি বিভিন্ন কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তবে এগুরোর মধ্যে প্রধানটি হচ্ছে দীর্ঘদিন সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে থাকা। এটি আউটার শেলকে ভঙ্গুর এবং অকার্যকর করে তোলে। হেলমেট উৎপাদনকারীরা আউটার শেলের জন্য পলিকার্বোনেট এবং এবিএস (থার্মোপ্লাস্টিক), ফাইবারগ্লাস, কার্বন ফাইবার এবং কেভলার কম্পোজিট ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে দামে তুলনামূলক কম হওয়া থার্মোপ্লাস্টিক ব্যাপকভাবে হেলমেট উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে থার্মোপ্লাস্টিকের আয়ুষ্কাল তিন থেকে পাঁচ পর্যন্ত হয়। হেলেমেট ব্যবহৃত পলিকার্বোনেটের আয়ুষ্কালের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি। দুর্ঘটনার সময় হেলমেটের ওপর প্রথম ধাক্কাটি সামাল দেয় এই আউটার শেল। তাই নিজের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে পাঁচ বছর পর হেলমেটটি পরিবর্তন করা উচিত।

চিক প্যাড ও ইনার লাইনার 

হেলমেট যতো ব্যবহার করা হবে, এর চিক প্যাড ও ইনার লাইনার ততোই পুরোনো হবে এবং এগুলোর মধ্যে তেল ও ধুলাবালি জমবে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে প্যাড ও লাইনারগুলো ধীরে ধীরে সরু হয়। একটা সময়ে গিয়ে হেলমেট কিছুটা ঢিলেঢালা হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ঢিলেঢালা হেলমেট মাথার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চিক প্যাড ও ইনার লাইনার অনেক উৎপাদনকারী পৃথকভাবে বিক্রি করে থাকে। আপনি অবশ্য চাইলে পুরো হেলমেট পরিবর্তন না করে চিক প্যাড ও ইনার লাইনার পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

গ্লু বা আঠা

হেলমেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে এতে বিভিন্ন লাইনারগুলোকে সংযুক্তকারী আঠা ছুটতে থাকা। দীর্ঘদিন ব্যবহারে তেল, রাসায়নিক, প্রসাধনী ও ঘামের কারণে হেলমেটর অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তরগুলোকে সংযুক্তকারী আঠা আলগা হয়ে যেতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে ইপিএস লাইনারটিও বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা/শাহেদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়