যে কারণে হঠাৎ বাইক থেকে ছিটকে পড়তে পারেন
ইকবাল আবদুল্লাহ রাজ || রাইজিংবিডি.কম
রাস্তায় বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হ্যান্ডেল অস্বাভাবিকভাবে ডান-বামে কাপুনি দিয়ে দুলে উঠে বাইক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। আর আপনি? বাইক থেকে ছিটকে পড়ে তিন হাত দূরে! এমন অভিজ্ঞতা কি কখনো আপনার হয়েছে?
এ ধরনের পরিস্থিতিতে হয়তো সৌভাগ্যবশত বাইক কোনো রকমে সামলে ফেলতে পেরেছেন। কিন্ত আপনি ভীষণ ঘাবড়ে গেছেন। কোনোভাবে বুঝতেই পারছেন না এমনটা কেন হলো…
MotoGP ট্র্যাকের রেসেও হয়তো দেখেছেন এরকম ভৌতিকভাবে বাইক নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে। চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ বাইকের হ্যান্ডেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য Wobbling করে বাইকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার নাম TANK SLAPPER.
Tank Slapper অনেকের সাথেই ঘটে থাকে। তবে অনেকেই জানেন না কেন এমন হয়, কখন হয় এবং এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
বিভিন্ন কারণে ট্যাংক স্ল্যাপার হতে পারে, যেমন-
➡️ রাস্তার মাঝে সূক্ষ্ম ফাটল থাকা।
➡️ চাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক না থাকা।
➡️ চাকার দু’পাশের থিকনেস কমবেশি থাকা অথবা টায়ারে ফাটল বা ড্যামেজ থাকা।
➡️ চাকায় সঠিক এয়ার প্রেশার না থাকা।
➡️ অ্যালয় বা স্পোক রিমের ক্ষেত্রে রিমে কোনো সমস্যা বা টাল থাকা।
যখন আপনি বাইক নিয়ে উচ্চগতিতে থাকেন তখন রাস্তার সরু কোনো ফাটল অথবা সড়কে থাকা রোড মার্কার পার হওয়ার সময় ট্যাংক স্ল্যাপারের শিকার হতে পারেন।
বাইকে অ্যালয় রিম থাকলে চাকা পরিবর্তনের সময় অবশ্যই রিমের অ্যালাইনমেন্ট পরীক্ষা করে ব্যালেন্স করিয়ে নেওয়া উচিত। যেপাশে কম ওজন সেইপাশে সীসার তৈরি ছোট একটি কাউন্টার ওয়েট বসিয়ে হুইল ব্যালেন্সিং করা হয়।
ফাটল থাকলে চাকা পরিবর্তন করে ফেলা উচিত। এরসঙ্গে রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী এয়ার প্রেশার ঠিক আছে কি না নিশ্চিত হতে হবে।
সাধারণত আপনি বাইকের গতি যত বাড়াতে থাকেন ট্যাংক স্ল্যাপারের সম্ভাবনা ততই বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে ১২০ কিমি/ঘন্টা স্পিডের পর থেকেই।
যেহেতু আমাদের দেশের সব রাস্তা বেশি মৃসন নয়, তাই অতিরিক্ত গতি তোলা ঝুঁকিপূর্ণ। খারাপ রাস্তায় ট্যাংক স্ল্যাপারের শিকার হওয়ার চান্স অনেক বেশি।
ট্যাংক স্ল্যাপারের দুর্ঘটনাগুলো অত্যন্ত মারাত্মক হয়। তাই আমাদের উচিত এর থেকে বেঁচে থাকা। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলেই ট্যাংক স্ল্যাপারের মত ভয়াবহ ঘটনা থেকে আমরা বাঁচতে পারব। যেমন-
➡️ টায়ার প্রেশার যথাযথ রাখতে হবে।
➡️ কিছুদিন পর পর টায়ারের কন্ডিশন ভালো আছে কিনা দেখতে হবে।
➡️ চেষ্টা করতে হবে নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালানোর। নিয়ন্ত্রিত গতি বলতে বুঝাচ্ছি স্পিড লিমিট মেনে রাইড করার কথা, আমাদের দেশের হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
➡️ ট্যাংক স্ল্যাপারের ঝুঁকি কমাতে আরেকটা কার্যকর উপাদান হচ্ছে স্টিয়ারিং ড্যাম্পার। এটা বাইকের হ্যান্ডেলকে স্থির করে রাখে এবং আচমকা স্টিয়ারিংকে ঘুরে যেতে বাধা দেয়। এতে উচ্চগতিতে বাইকের হ্যান্ডেল স্ট্যাবল থাকে। উচ্চ সিসির বাইকগুলোতে স্টিয়ারিং ড্যাম্পার ইন্সটল করাই থাকে, তবে কম সিসির বাইকে থাকে না।
যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে ট্যাংক স্ল্যাপারের বিপদ থেকে বাঁচতে ভালো ব্রান্ডের আফটারমার্কেট স্টিয়ারিং ড্যাম্পার ইন্সটল করে নিতে পারেন আপনার বাইকে।
আজ এ পর্যন্তই, হ্যাপি রাইডিং।
লেখক: অ্যাডমিন Bike Doctor BD
ঢাকা/শাহেদ