‘বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর যে স্বাধীনতা এসেছিল, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে স্বাধীনতার সেই আনন্দ পূর্ণতা পেয়েছিল।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধনের সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮ জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) মুক্তি পান। সেখান থেকে তিনি লন্ডনে চলে যান। লন্ডন থেকে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। পথিমধ্যে তিনি দিল্লিতে থামেন। যেহেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীসহ ভারতের সকল জনগণ আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। এই ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন।’
‘আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিলাম সত্য, কিন্তু তখনো সকলের কাছে এটাই মনে হয়েছিল যে, বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা যেন অধরা, স্বাধীনতা যেন পূর্ণতা পায়নি।’
ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, ‘আমি, আমার বোন রেহেনা, জয়, রাসেল আমরা বন্দিখানায় ছিলাম। ২৭ ডিসেম্বর সকালে ভারতের সামরিক বাহিনীর মেজর অশোক তারার নেতৃত্বে আমরা মুক্তি লাভ করি। কিন্তু সেই বন্দিদশায় থেকেও আমরা শুনেছি সেই জয় বাংলা স্লোগান। আমরা বন্দি, কিন্তু চারিদিকে বিজয়ের উল্লাস। আমরা সেদিন ভেতর থেকে জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছি। যেদিন মুক্তি পাই, সেদিন দেখেছি, মানুষের চোখে অশ্রু, মুখে বিজয়ের হাসি। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিজয়ের হাসি তারা হেসেছে। চোখের পানি ফেলেছে একদিকে, অপরদিকে বিজয়ের হাসি এসেছে।’
‘অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে, কবে ফিরে আসবে তাদের প্রিয় নেতা। সেদিন লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল এখানে। একদিকে তারা আপনজন হারিয়েছিল, ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়েছিল, আহত অথবা নির্যাতিত; তারপরও সেই মহান নেতাকে ফিরে পেয়ে তারা যেন হারানোর বেদনা ভুলতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘১০ জানুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। সেদিন আমরা ফিরে পেলাম সেই মহান নেতাকে, যিনি তার সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছন। এই বাংলার দুঃখী মানুষ তাদের কথা বলতে গিয়ে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো কারাগারে কাটিয়েছেন। তার জীবনটা উৎসর্গ করেছেন এ দেশের মানুষের জন্য।’
কারাগারে বঙ্গবন্ধুর কষ্টের সময়গুলো বর্ণনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাকে যখন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে, সেখানে গরমের সময় প্রচণ্ড গরম, শীতের সময় প্রচণ্ড শীত। তাকে কোনো কাগজ দেয়া হয়নি। পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। একটা ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস তিনি সেই বন্দিশিবিরে কীভাবে ছিলেন, কীভাবে সময় কাটিয়েছেন। কী চিন্তা করেছেন? তিনি জানতেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। তিনি জানতেন, এ দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। তাই কখনো তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন না। যখনই তাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হতো, তখন তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিতেন।
‘আমাদের দুর্ভাগ্য- পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চেষ্টা করে যাকে হত্যা করতে পারেনি, তাকেই জীবন দিতে হয়েছে বাংলার মাটিতে মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটা গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু হত্যাকাণ্ড না, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আজকে সেই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে এই ভাষণ শুধু আমাদের না, আড়াই হাজার বছরের সব ভাষণের মধ্যে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে।’
এ সময় জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটা অন্ধকার সময় ছিল। আজকে আমরা সেই অন্ধকার সময় কাটিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলার জনগণের প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী সংগঠনের প্রতি, সকল শ্রেণি-পেশার জনগণ, যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।’
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ সময় তার পাশে বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার পাশে শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে ল্যাপটপের বাটন টিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন। যখন ক্ষণগণনা উদ্বোধন করা হয়, তখন সময় বাকি ছিল ৬৬ দিন ৬ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। এর মাধ্যমে সারা দেশে বসানো ঘড়িগুলোতে একযোগে ক্ষণগণনা শুরু হয়।
ঢাকা/পারভেজ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন