বঙ্গবন্ধুকে ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনে ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ’
বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। হয়েছে গবেষণা-বিশ্লেষণ। তবে অনেক লেখা হারিয়েও গেছে সংরক্ষণের অভাবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেগুলো হয়তো পড়ার সুযোগই পায়নি।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু নিজে তার রাজনেতিক জীবনে অনেক বক্তব্য রেখেছেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও সংস্থায় কথা বলেছেন। সেগুলোর কিছু কিছু বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ জেনেছে, পড়েছে। আবার কিছু কিছু সঠিক প্রচারের অভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর নিজের কথা, তাকে নিয়ে অন্যদের কথা বা প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে এবং সংরক্ষণ করতে কাজ করছে ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কইভ’। এ নামে ফেসবুক পেজে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করছে সংশ্লিষ্টরা।
‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কইভ’ পেজের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ কাজে তারা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ‘কোয়ালিটি প্রেজেন্টেশন’ হয় সেদিকে খেয়াল রাখেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত যেকোনো কিছুর যেন অথেনটিসিটি থাকে, ইমোশন (আবেগ) থাকে, ক্রিয়েটিভি (সৃষ্টিশীল) থাকে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকেন তারা।
২০১৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ’ পেজটি খোলা হয়। প্রথমদিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কলাম-নিবন্ধ-প্রবন্ধ এগুলো সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে পেজটি খোলা হলেও মানুষের আগ্রহ বাড়ায় এখন নানা ধরনের কনটেন্ট আর ডাইমেনশন নিয়ে কাজ করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
ত্রিমাত্রিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপনের প্রথমটিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘বহুমাত্রিকতায় বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু তুখোড় রাজনীতিবিদ ছিলেন। অত্যন্ত ভালো বলতেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। সেগুলো বঙ্গবন্ধুর বচনে অথবা কোনো বক্তব্য লিখিত পড়েছেন। এ জায়গাগুলো থেকে যখন কন্টেন্ট তৈরি করা হয় তখন এটাকে বলা হচ্ছে ‘বহুমাত্রিকতায় বঙ্গবন্ধু’। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকগুলো টেমপ্লেট রয়েছে পেজে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর নিজের অনেক বক্তব্য কারাগারের রোজনামচাসহ অন্যান্য বইতে এসেছে। আবার ১৯৭২ সালে বা ১৯৬৬ বা ১৯৪৭-এ কোনো ভাষণে তিনি উল্লেখযোগ্য কথা বলেছেন। ওই বক্তব্যের পুরোটা অনেক সময় পড়া হয়ে ওঠে না বা কম মানুষই পুরোটা পড়ে। সেটা থেকে চুম্বক অংশ উঠিয়ে নিয়ে এসে প্রেজেন্টেবল ওয়েতে গ্রাফিক্স টেমপ্লেটের মাধ্যমে উপস্থাপন করছে ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ’।
ত্রিমাত্রিকতার দ্বিতীয়টিকে বলা হচ্ছে ‘আমার বঙ্গবন্ধু’। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাধারণ এবং মানুষের অসাধারণ চিন্তা। কোনো একজন রিকশাচালক, ছাত্র, মাদ্রাসার শিক্ষক, যে কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যখন কোনো কথা বলে বা ভিডিও বা চ্যানেলে নিউজ হচ্ছে, কোনো পত্রিকায় আসছে, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কারো উক্তি, সেটা হচ্ছে ‘আমার বঙ্গবন্ধু’।
‘মহাকালের মহামানব’ হচ্ছে ত্রিমাত্রিকভাবে বঙ্গন্ধুকে উপাস্থাপনের তৃতীয় মাত্রা। এ ক্ষেত্রে উপস্থাপন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কোনো ইভেন্ট অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর লাইফের বিভিন্ন ইভেন্ট।
বঙ্গবন্ধু নামটি বাঙালির কাছে আবেগ-অনুভূতির একটি নাম। ত্রিমাত্রিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ১৫ আগস্ট, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ এবং অন্যান্য দিবসকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরছে ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ’। শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, যেকোনো প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ‘বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ’ ফেসবুক পেজটিতে লাইক আছে ১৪ লাখের বেশি। আর ফলো করছে ১৫ লাখের বেশি। এছাড়া www.bangabandhuonline.org নামের একটি ওয়েবপোর্টালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা, মুক্তি সংগ্রাম, হত্যাকাণ্ড, শাসনামল, পরিবার, অর্জন ও স্বীকৃতি, ভাষণ, রচনাগুলো, বিভিন্ন প্রকাশনার অডিও-ভিডিওস্থির চিত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করা মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর অজানা অনেক কথা জানতে পারছেন।
পারভেজ/এসএম/সাইফ