ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মুক্তা কেন বনবাসে?

মোয়াজ্জেম হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ৬ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তা কেন বনবাসে?

এই বাঁশঝাড়ে ছোট্ট ছাপরায় একঘরে জীবন কাটাচ্ছেন মুক্তা বেগম

মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট থেকে : এতিম অসহায় নারী মুক্তা বেগম (২৭)। কাজের সন্ধানে ছয় বছর আগে ময়মনসিংহ গিয়ে স্বামী আবুল কাশেমকে হারিয়েছেন। এর পর থেকে দুই ছেলে মুসা ও মুন্নাকে বুকে আগলে রেখে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তিনি। অনাহারী মুক্তা সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে এক ধনাঢ্য পরিবারে ঝিয়ের কাজ নেন। আর সেটাই তার জন্য কাল হয়। তার সম্ভ্রম কেড়ে নেয় ওই বাড়ির কলেজপড়ুয়া যুবক সাজু।

 

ঘটনার বিচার চেয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তামাশার বিচার পেলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন বাঁশঝাড়ের ভেতর ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য মুক্তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়ায় তাকেও সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি।

 

এই অমানবিক লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুনিয়াটারী জামে মসজিদসংলগ্ন এলাকায়। কেউই যেন মুক্তার পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছে না। তাকে বনবাসেই থাকতে হচ্ছে।

 

এখন সচেতন মানুষের প্রশ্ন- মুক্তা বেগমের কেন এই করুণ পরিণতি। সভ্য সমাজে মুক্তা কেন বনবাসে?

 

মুক্তার পক্ষ নেওয়ায় একঘরে হয়েছেন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাসনা বেগম

 

ধর্মীয় গোঁড়ামির এই জনপদে বনবাসে থাকা মুক্তা বেগমের পাশে কি কেউ দাঁড়াবেন? নাকি মুক্তা আজীবন বনবাসেই থাকবেন? প্রশাসনের কাছেই এসব প্রশ্নের উত্তর চায় সচেতন নাগরিক সমাজ। 
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের খুনিয়াটারী (কাল্টুর বাজার) এলাকার আবুল কালামের কলেজপড়ুয়া ছেলে শাহ আলম ওরফে সাজাহান আলী সাজু বাড়ির কাজের মেয়ে এবং দুই সন্তানের জননী এতিম মুক্তা বেগমকে দিনের পর দিন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। মুক্তা বেগমেরও বাড়ি ওই একই এলাকায়। তিনি কাজ শেষে নিজের বাড়িতে গেলেও কোনো কোনো দিন কাজের চাপে রাতে ওই বাড়িতেই ঘুমাতেন। সেই সুযোগে লম্পট সাজাহান আলী সাজু ‘সব গোপন ভিডিও’ ইন্টারনেটে ফাঁস করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তা বেগমকে প্রায়ই দিনে-রাতে ধর্ষণ করত। এরই ফলে প্রথমে একটি সন্তান মুক্তার পেটে এলে সেটি চিকিৎসকের পরামর্শে নষ্ট করে ফেলেন। পরে মুক্তা আবার গর্ভবতী হলে লম্পট সাজু তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাচ্চা নষ্ট করতে নিষেধ করে। কিন্তু পরে এই বাচ্চা নিয়েই বিপাকে পড়েন মুক্তা। সব হারিয়ে পথে বসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত একটুখানি আশ্রয় মিললেও এখন ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে তাকে বনবাসেই থাকতে হচ্ছে। এতিম মুক্তার ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!

 

এ বিষয়ে মুক্তা জানান, তিনি পেটের দায়ে ঝিয়ের কাজ করতেন খুনিয়াটারী (কাল্টুর বাজার) এলাকার আবুল কালামের বাড়িতে। কাজ শেষে গোসলখানায় গেলে প্রায়ই লম্পট সাজু (২১) তার সম্ভ্রম দেখার চেষ্টা করত। তা টের পেয়ে বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসতেন মুক্তা। সাজুদের বাড়িতে ঘর মোছার কাজ করার সময় হঠাৎ একদিন দুপুরে মুক্তাকে পেছন থেকে ফেলে দিয়ে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে সাজু। এরপর জোরপূর্বক আরো ছয় দিন একই কাজ করে। এতে মুক্তা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। মানসম্মান ও কলঙ্কের ভয়ে আড়াই মাসের মাথায় গোপনে বাচ্চাটা নষ্ট করেন তিনি। এর পর সাজুর হাত-পা ধরে অনুরোধ করেন, যেন সাজু আর এসব না করে। এসব আকুতিমিনতি না শুনে সব ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাজু মুক্তাকে স্ত্রীর মতোই ব্যবহার করেছে। আবার মুক্তার পেটে বাচ্চা আসে। বিষয়টি সাজুকে জানানোর পর নষ্ট না করতে বলে এবং বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে পেটের বাচ্চা ছয় মাস হয়ে গেলে তখন সাজু বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়।

 

এ অন্যায়ের বিচার চেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কেউই পাত্তা দেননি মুক্তার কথায়। অবশেষে ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয় মেম্বারের কাছে গেলে তিনি নারী ইউপি সদস্য হাসনা বেগমের কাছে পাঠান। হাসনা বেগম ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তারকে বিষয়টি জানালে তিনি চৌকিদার পাঠিয়ে মুক্তাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। পরে সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের মেম্বার লিলি বেগমের কাছে মুক্তাকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ছয় মাস আগে একটি ছেলের জন্ম দেন মুক্তা। সাড়ে পাঁচ মাস পর বাচ্চাটা গত ১ জুন মারা যায়। সেই বাচ্চার লাশ সাজুর বাড়িতে রেখে আসলে তারা তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। বিষয়টি মীমাংসা হচ্ছে না বলে সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফার পরামর্শে হাতীবান্ধা থানায় অভিযোগ করেন মুক্তা। পরে মোস্তফা ১ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলার মীমাংসা করেন। কিন্তু মুক্তা এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। সাদা কাগজে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

 

মুক্তা আরো জানান, মুক্তাকে ইউপি সদস্য হাসনা বেগমদের ৩ শতাংশ জমি নিয়ে দিয়েছেন সিঙ্গিমারী ইউপি চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফা। সেটিও একটি বাঁশঝাড়ের ভেতর। সেখানে কয়েকটা টিন দিয়ে একটি টিনের ছাপরাঘর করে দেওয়া হয়েছে। ঘরের দরজা-জানালা কিছুই নেই। চারদিকে ঝাড়জঙ্গল। সেখানে না আছে গোসলখানা, না আছে পানি পাওয়ার কোনো উপায়। ঘরের পাশের পুকুরের পচা পানিতেই সবকিছু করতে হয়। গোসল থেকে খাওয়া এবং পায়খানা-প্রস্রাব সবকিছুই। এ এক করুণ পরিণতি। কারো সঙ্গে কথা বলা যায় না। এমনকি কারো বাড়িতে যাওয়া যায় না। সবকিছুই বন্ধ করে দিয়েছেন খুনিয়াটারী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম ও কমিটির সদস্যরা।

 মুক্তা বেগম

 

মুক্তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হাসনা বেগম তার বাড়িতে আসার অনুমতি দেওয়ায় তাকেও (হাসনা) একঘরে করে রাখা হয়েছে। এখন মুক্তার জন্য হাসনা বেগমও বেকায়দায় পড়েছেন। তবে কোনো কিছুর ভয় না পেয়ে মুক্তাকে ঠাঁই দেবেন বলেই মসজিদ কমিটিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন হাসনা বেগম।

 

মুক্তা বলেন, ‘মুই লম্পট সাজু আর মসজিদ কমিটির বিচার চাং (চাই)।’

 

সাহাজান আলী সাজু ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পরিবারের চাপেই আমি কিছু করতে পারিনি। তবে বিষয়টি যেন বাড়াবাড়ি না হয়, সেজন্যই মীমাংসা করা হয়েছে।’ কত টাকায় মীমাংসা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে শোনানো হয়েছে যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমার মামা খাইরুজ্জামান, ফুফা শুকারুসহ অন্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মামলা তুলে নিতে যত খরচ লাগবে সবই আমাদের করতে হবে।’ সাজু ভেলাগুড়ি আরশিয়া টেকনিক্যাল কলেজ থেকে একাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানান।

 

এ প্রসঙ্গে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাসনা বেগম বলেন, ‘এতিম মুক্তা বেগম বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াত। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিজয় কুমার দাদা ওই নারীকে আমার কাছে পাঠালে আমি ঘটনার বিস্তারিত শোনার পর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তারকে সবকিছু জানাই। পরিষদের নছমুদ্দিন চৌকিদারের মাধ্যমে মুক্তা বেগমকে চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার আমার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। ওই নারীর মুখে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তার বাবার বাড়ি সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফার কাছে সবকিছু জানায় ভেলাগুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার। পরে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সংরক্ষিত নারী সদস্য লিলি বেগমকে পাঠিয়ে তাকে সিঙ্গিমারী নিয়ে যান। ওই ইউনিয়নে থাকার সময়ে মুক্তার গর্ভের সন্তান প্রায় চার মাস পর হাতীবান্ধা উপজেলা হাসপাতালে জন্ম নেয়। বাচ্চা হওয়ার পর প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস বিচার না পেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সিঙ্গিমারী ইউপি চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফা হঠাৎ গোপনে ঘটনাটি রফাদফা করে দেন।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘শুনেছি, সালিশ-মীমাংসার নামে মুক্তা বেগমের কাছে স্থানীয় বিচারকরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। ওই স্বাক্ষরে নাকি ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেখানো হয়েছে এবং তালাকও দেওয়া হয়েছে। তামাশার বিচার হয়েছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুই জানে না।’

 

মুক্তা বেগম ও সাহাজান আলী সাজুর বক্তব্যই প্রমাণ করে দীর্ঘদিন পর থানায় মামলা হওয়ার পর সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফার মাধ্যমে মীমাংসা হয়। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সাজুকে। মামলা তুলে নিতে সব খরচ ছেলেপক্ষের দেওয়ার কথা হয়েছে। গোপনে সালিশ-মীমাংসা হয়েছে। ছেলে-মেয়ের কাছে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। ওই স্বাক্ষর কাজির কাবিননামায় নেওয়া হয়েছে। এতে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয়েছে। আবার ওই সালিশেই বিবাহবিচ্ছেদ দেখানো হয়েছে। অথচ আমরা কিছুই জানি না। এই বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম দোষারোপ করছেন সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম জি গোলাম মোস্তফাকে। কেউ সালিশ-মীমাংসার কথা পুরোপুরি স্বীকার করছে না। তবে ইউপি সদস্যা হাসনা বেগম ও লিলি বেগম সালিশ-মীমাংসার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া সাজাহান আলী সাজু নিজেও সালিশ-মীমাংসার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে রাইজিংবিডি ডটকম এই খবর জেনে যাওয়ায় প্রশাসনিক একশনের ভয়ে এখন বিচার নিয়ে দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যানের মধ্যে রশি টানটানি চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।

 

এ ছাড়া হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মতিন প্রধানও মুখ খুলতে চাইছেন না। তিনিও ভিকটিমের অভিযোগ গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।’

 

ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘শুনেছি, সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদেই বিচার হয়েছে। আমার পরিষদের ইউপি সদস্য বিজয় কুমার ও হাসনা বেগম ভালো বলতে পারবেন। তাদের সঙ্গেই আপনি যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।’

 

আপনার ইউনিয়নে একজন নারী দীর্ঘদিন ধরে একঘরে হয়ে আছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’

 

১ জুলাই সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফার সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে যাওয়া হয়। তাকে না পেয়ে ফোন করা হয়। তিনি পারিবারিক কাজে রংপুরে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আবার সংযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি পরে কথা বলার পরামর্শ দেন। তৃতীয় দফায় আবার সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে ৪ জুলাই তিনি বলেন, ‘মুক্তা বেগম আমার ভাতিজি হয়। কোনো কিছু জানতে হলে আপনি ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আমি একসময় আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে দেখা করব।’ এসব কথা বলেই তিনি সেলফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

 

স্থানীয় খুনিয়াটারী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি এবং ওই মসজিদের কতিপয় মুসল্লি মনে করেন, মুক্তাই এজন্য (ধর্ষণ ও গর্ভধারণ) দায়ী। এজন্যই তাকে বনবাসে পাঠানো হয়েছে। করা হয়েছে সমাজচ্যুত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারী ও পুরুষ এমনটাই দাবি করেছেন ।

 

খুনিয়াটারী জামে মসজিদের ইমাম ফজলুল করিম ও মুয়াজ্জিন মাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা কোনো ফতোয়া দেইনি। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আলোচনা তুলেছেন যে, এই সমাজের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। তাই এই ঘটনাটি মেনে নেওয়া যায় না। দূরে কোথাও হলেও কিছুটা মানা যেত। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলেছি যে, দেখেন ঘটনাটি যেভাবে সমাধান করলে ভালো হয়, আপনারা সেভাবেই করেন। কারণ আমরা ফতোয়া দেওয়ার কোনো যোগ্যতা রাখি না। আবার কেউ কেউ মুক্তা নামের ওই নারীটির পক্ষেও রয়েছেন। তাই এখন পর্যন্ত বিষয়টি ওইভাবেই আছে।’

 

খুনিয়াটারী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘খুনিয়াটারী মসজিদে বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। অধিকাংশই চেয়েছিলেন একঘরে করে রাখতে। আবার কয়েকজন একঘরে করে রাখার পক্ষে ছিলেন না। ফলে বিষয়টি সেভাবেই আছে। আর ওই মেয়েটা এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তো আমাদের মসজিদের মুসল্লি বা সমাজের লোক নন। তাই একঘরে কথাটা উঠলে এখনো ওই অবস্থায় রয়েছে। তবে তার সঙ্গে কেউ কথা বলে না।’

 

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)আব্দুল মতিন প্রধানের সঙ্গে ১ জুলাই থানায় গিয়ে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কল ডাইভার্ড থাকায় মতিয়ার রহমান নামের একজন এসআই ফোন রিসিভ করেন একাধিকবার। ওসি আব্দুল মতিন প্রধান সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কৌশলে ওই এসআইকে দিয়ে কথা বলান।

 সাজাহান আলী সাজু

 

এসআই মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’ তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় থানায় মামলা রয়েছে।

 

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাকরি করছি। এ ধরনের কোনো ঘটনার খবর পাইনি। তবে মুক্তা বিচারের জন্য ঘুরে বেড়ালেও আমার কাছে আসেননি। আমি বিষয়টি জানি না। আমি আপনার কাছেই প্রথম এ ঘটনার কথা শুনলাম। ওই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩০ জুন দেখা হয়েছে, অথচ তারাও তো এ বিষয়ে কিছু জানালেন না। এর পরও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

 

হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ঘটনাটি জানেন না দাবি করে বলেন, ‘এটা তো ন্যক্কারজনক ও সমাজবিরোধী। এটা মেনে নেওয়া যায় না।। মানুষ তো সামাজিক জীব। কারণ ব্যক্তির অন্যায় থাকতে পারে, তাই বলে সমাজ তো তাকে একঘরে করতে পারে না। আমি অপরাধটা দেখব। অপরাধী ব্যক্তিকে আমি দেখব না। অপরাধের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাই বলে কি সে সমাজে বাস করতে পারবে না? সমাজে মানসম্মান নিয়ে সে চলতে পারবে না?’

 

উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু আরো বলেন, ‘যদি আমার সাথে যোগাযোগ রাখে বা আমাকে মোবাইল করে, তাহলে আমি সরাসরি যাব এবং কথা বলব।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুলাই ২০১৫/জিসান/সন্তোষ/রফিক/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়