ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন দাবি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের অতিদরিদ্র মানুষদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করেছে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।

রোববার ঢাকায় পল্টনে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ইকো কো-আপারেশন এর সিভিক এনগেজমেন্ট এলায়েন্স প্রোগ্রাম ও ক্রিশ্চিয়ান-এইড এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এ দাবি জানান।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলমের সভাপতিত্বে এবং ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। অনুষ্ঠানে ইকো কো-অপারেশনের লবি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি এক্সপার্ট আরশাদ সিদ্দিকীসহ ইআরএফ এর সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।

সংলাপে জানানো হয়, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ অতিদরিদ্র ২ কোটি এবং দরিদ্র ২ কোটিসহ মোট ৪ কোটি মানুষ (২০১৬ সালের বিবিএস-এর তথ্যানুযায়ী), যার অর্ধেক বেশি কম ও অপর অর্ধেক অল্প কম খেতে পায়। প্রধানত এ জনগোষ্ঠীই দরিদ্র বলে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। অপরদিকে, সমাজে আয়-বৈষম্যের কারণে শীর্ষ ১০ ভাগ ধনী পরিবারের আয় মোট জাতীয় আয়ের ৩৮ শতাংশ এবং নিম্নে অবস্থানকারী ১০ ভাগ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ১ শতাংশের মালিক। এ পরিস্থিতি দেশে সব মানুষের মৌলিক অধিকার- খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রতিষ্ঠার বিষয়কে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। এ প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, সংবিধান খাদ্য অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে এখন প্রয়োজন আইন তৈরি করা। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে এবং ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্যের হার কমে আসার ক্ষেত্রেও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু এরপরেও এখনো বাংলাদেশের ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ অপুষ্টির শিকার। যার মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। উত্তরবঙ্গসহ দারিদ্র্য প্রবণ ৯ জেলায় ও এর বাইরে নদীভাঙ্গণ এলাকা, চরাঞ্চল ও হাওর এলাকা, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরের বস্তিবাসী, চা বাগানের শ্রমিক, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায়, হিজড়া সম্প্রদায়, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যান্য অংশ মানবেতর জীবনযাপন করে। এদের খাদ্য ও পুষ্টির দিকে বিশেষ মনযোগ দিতে এবং তা নিশ্চিতে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।

তারা বলেন, দেশের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প যেমন প্রয়োজন রয়েছে, পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও প্রকল্প নিতে হবে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে এবং এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ নিজেরাই নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।

সংলাপে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে গণমাধ্যম  খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণের আলোকে খাদ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে নীতি-নির্ধারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুলাই ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়