ঢাকা     বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

‘পারিপার্শ্বিকতায় শিশুরা ক্রাইমে জড়ায়’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৩১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পারিপার্শ্বিকতায় শিশুরা ক্রাইমে জড়ায়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। শিশুদের ক্রাইমে জড়ানোর জন্য দায়ীদের ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার পুলিশ সদস্য ও সমাজ সেবা অফিসারদের অংশগ্রহণে ‘ডাইভারশন ফ্রম দ্য পুলিশ স্টেশন আন্ডার দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস ও ইউনিসেফ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে সেটাও আমাদের চিন্তা করা উচিৎ।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একটা শিশু খাবার চুরি করে। খাবার চুরি করে কেনো? তার পেটে ক্ষুধা লাগলে পরে খাবার চুরি করে। একটা মোবাইল চুরি করে কেনো? তার বন্ধুর সাথে মোবাইলে কথা বলার জন্য নয়। মোবাইল চুরি করে সেটা বিক্রি করে যে টাকাটা পাবে, সে টাকাটা দিয়ে তার প্রয়োজনীয় কিছু একটা কিনবেন। যে জিনিসটা তার মা বাবা তাকে দিতে পারেনি। মা বাবা যোগান দিতে পারেনা বলে শিশুরা খারাপ পথে চলে যায়, মা বাবা ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারে না বলে শিশুরা খারাপ পথে চলে যায়।’

সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস এর চেয়ারপারসন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘যখন আমি নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলাম তাদের শিশু বিচার ব্যবস্থা দেখার জন্য। সেখানে আমাকে বলা হয়েছিলো যে, থানার থেকে ওনারা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ আসামী বলেন শিশু বলেন ওইখান থেকে মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। চিন্তা করেন ১০০ থেকে ৭৫জন চলে গেলে মাত্র ২৫ জন যাবে কোর্টে। কোর্টে যাওয়ার পরে কোর্ট থেকে আরও ১০ থেকে ১৫ ভাগ ডাইভারশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। আজকে এখানে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি সবাই ডাইভারশনের ব্যাপারে আলাপ করার জন্য।’ 

তিনি পুলিশ সদস্য ও সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের সর্বপ্রথম মনে রাখতে হবে আমরা যাদেরকে নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি বা করছি তারা হচ্ছে আমাদের দেশের শিশু। আপনারা সবাই জানেন  শিশুরা নিষ্পাপ হয়, অবুঝ হয়। ঠিক চিন্তাভাবনা করে কোনো কাজ করে না। এ কথাগুলি আমাদের মনে রাখতে হবে।’

শিশুদের খারাপ কাজে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে এটাই মনে রাখতে হবে, শিশুরা খারাপ পথে যায় খারাপ কাজ করে, চুরি করে, মারামারি করে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো একটা কারণ আছে। যার জন্য আমি বলবো যে আদতে শিশুরা এই খারাপ কাজ বা খারাপ ব্যবহারের জন্য দায়ী নন। শিশুরা মারামারি করে কারণ তাদের পরিবারের মধ্যে মারামারি হয় বলে এটাকে জীবনের অংশ মেনে নেয়। যে ঘরে দৈনন্দিন মারামারি হয় সে ঘরে শিশুরা বড় হচ্ছে মারামারি দেখতে দেখতে। মারামারি তাদের জন্য কিছুই না ।’ 

পুলিশ সদস্য ও সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা হচ্ছে শিশুদেরকে কীভাবে ভালো পথে নিয়ে আসবো। কি করলে ভালো হবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’ 
প্রবেশন অফিসার এবং পুলিশ সদস্যদের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন আপিল বিভাগের এ বিচারপতি।'

অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (ইনস্টিটিউশন) মো. আবু মাসুদ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিষ্ট শাবনাজ জাহেরীন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৯/মেহেদী/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়