ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পাঁচ কর্মচারীর সাহসিকতায় বাঁচেন ১৫০ থেকে ২০০ জন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঁচ কর্মচারীর সাহসিকতায় বাঁচেন ১৫০ থেকে ২০০ জন

রাজধানী ঢাকার বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে (ফারুক রূপায়ণ টাওয়ার) এক বছর আগে (২০১৯ সালের ২৮ মার্চ) দুপুর ১টায় আগুন লাগে।

২২ তলা ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ও ক্রমেই সেটি অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন।

১৪ তলার একটি রুমে দুপুরের খাবার শুরুর মুর্হূতেই আওয়াজ এলো আগুন আগুন। আওয়াজ শুনে খাবার রেখেই কয়েকজন কর্মচারী ছুটলেন ঘটনাস্থলের দিকে। কিন্তু মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।  তারা আর নীচে নামতে পারলেন না। আবার ছুটে গেলেন ছাদে।

সেখানে ততক্ষণে বিল্ডিংয়ের আটকে পড়া ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের জটলা তৈরি হয়। তখন লিফটম্যান ও ইলেকট্রিশিয়ানদের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে পাশের বিল্ডিংয়ের সাথে কাঠ বিছিয়ে সংযোগ স্থাপন করে সরিয়ে নেয়া হয়। সেই দৃশ্যটি ছিল মর্মস্পর্শী ও বিপদজনক। যেকোনো মুহূর্তে পড়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এফআর টাওয়ারের লিফটম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভয়ঙ্কর বিপদের সময় মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। বাঁচার জন্য তখন যেকোনো ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তা সেদিন স্বচক্ষে দেখলাম। স্বাভাবিক সময় হলে একজন মানুষকেও আমরা এভাবে পাশের বিল্ডিং এ পাঠাতে পারতাম না। কিন্তু সেদিন আল্লাহর রহমতে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ লোককে আগুন থেকে রক্ষা করতে পেরেছি।’   

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে এফআর টাওয়ারে চাকরি করি। প্রতিদিনের মত সেদিনও অফিসে যাই। আমাদের দুপুরের খাওয়ার সময় ফিক্সড থাকে। দুপুর পৌনে একটার দিকে লাঞ্চের জন্য ১৪ তলায় যাই। সেখানেই খাবার রাখতাম। খাবার রেডি করছিলাম তখনই খবর পাই আট তলায় আগুন লেগেছে। আগুন কীভাবে নেভাতে হয় আমরা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। আগুন নেভানো যন্ত্র নিয়ে আমরা কজন বের হয়ে পড়ি। ১৪ তলা থেকে নীচে নামতে নামতে ১০ তলায় আসি। তখন আগুনের ফুলকি সিঁড়ি দিয়ে আসছিল। আর সামনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমরা পিছপা হই। আবার উপরে উঠতে থাকি। ওঠার সময় সব দরজায় নক করে আগুন লাগার কথা বলে যাই।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ জন ছাদে চলে যাই। সেখানে ১৫০ থেকে ২০০ জন লোক ছিল। আমরা কাঠ বিছিয়ে সিঁড়ি তৈরি করে তাদের পাশের ভবন আওলাদ সেন্টারে যেতে সাহায্য করি। তখন আগুনের উত্তাপ বাড়ছিল। এজন্য আর সেখানে থাকিনি। আমরাও আওলাদ সেন্টারে চলে যাই।’ 

মনিরুল বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমরা অফিসে ঢোকার অনুমতি পাই। দেখি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একে একে লাশ নামিয়ে আনছে। ১০ তলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেখান থেকে সবচেয়ে বেশি লাশ নামিয়ে আনা হয়।’ 

আফসোস করে মনিরুল বলেন, ‘যারা আমাদের সামনে বিল্ডিংয়ে উঠেছে সেই পরিচিতদের লাশের মিছিল আমাদের সামনে। খুব কষ্ট লাগে। নিজের জীবন দিয়ে হলেও যদি তাদের সাহায্য করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো লাগতো। কিছুই পাওয়ার আশা ছিলনা আমাদের। শুধু যদি তাদের বাঁচাতে পারতাম।’ 



ঢাকা/মামুন খান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়