ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চিকিৎসকের মৃত্যুতে করোনা আতঙ্কে স্বাস্থ্যকর্মীরাও

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিকিৎসকের মৃত্যুতে করোনা আতঙ্কে স্বাস্থ্যকর্মীরাও

সাধারণ মানুষের মতো করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এম এম জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

তারা জানিয়েছেন, স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সুরক্ষা সামগ্রী অনেক জায়গায় নেই। কোথাও কোথাও সুরক্ষা নিয়েও রোগীদের সেবা দিতে মনের ভেতরে ভয় তৈরি হচ্ছে। তবে ভীতির মধ্যেও তারা রোগীদের সেবা অব্যাহত রেখেছেন।

নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় ও স্পর্শকাতর হওয়ায় চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত একজন সেবিকা বলেন, কাজের স্বাধীনতা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত না করা হলে আমাদের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে তা কমবে না। যারা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন তারাই সুরক্ষা পোশাক পাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ রোগীদের যারা সেবা দিচ্ছেন তারা কিন্তু পাচ্ছে না। ফলে মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে যে সাধারণ রোগীও করোনা আক্রান্ত হতে পারে।

ঢাকা মেডিক্যালের এক চিকিৎসক বলেন, আমরা যেহেতু চিকিৎসক, প্রতিদিন হাসপাতালে যাই, কাজ করি, ঝুঁকি আছে তারপরও মানবিকতার জন্য করি। মানুষকে হেল্প করার জন্য। কিন্তু আমাদের সব সেক্টরে মানবিক কিছু মানুষের দরকার। এই খারাপ পরিস্থিতিতে কেউ খাদ্যগুদাম করছে, কেউ ভোজ্যতেল মজুত করছে, কেউ টেন্ডার পেয়ে চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রী নিম্নমানের দিচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষের অজ্ঞতা আছে। চিকিৎসকদের বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে। আমরা ঢাকা মেডিক্যালে পড়াশোনা করেছি, মানুষের সেবা করছি। জীবনের রিস্ক আছে, সন্তান আছে। সবার তো জানের ভয় আছেই নাকি? আমাদের সুরক্ষা সামগ্রী যদি প্রটেকটিভ হতো, তারপরও নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম। কিন্তু সেটাও নেই। কোথাও স্ট্যান্ডার্ড পিপিই নাই। কেউ কাপড় দিয়ে, বস্তা দিয়ে, কেউ ব্যাগ দিয়ে, কেউ মশারির কাপড় দিয়ে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বানিয়ে দিছে।

ওই চিকিৎসক আরও বলেন, মানুষ পৃথিবীতে আসছে, মরতে হবে। এটা কিন্তু প্রিভেন্টিভ না। তবে  জেনেশুনে তো কেউ আগুনে ঝাপ দেবে না। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক সমাজকে বিভিন্নভাবে ইম্পোজ করে কাজ করতে বাধ্য করছে। ঢাকা মেডিক্যালের যেসব ছাত্র বিভিন্ন হেলথ কমপ্লেক্সে কাজ করে তাদের স্যাম্পল আনতে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সুরক্ষার কোনো সামগ্রীই দেওয়া হয়না। এরা গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে স্যাম্পল আনে, কিন্তু তাদের খাওয়ার খরব কেউ নেয় না। কুয়েত মৈত্রী আর কুর্মিটোলা হাসপাতাল দিয়ে তো অবস্থার বিচার করা যাবে না। ঢাকা মেডিক্যালে রোগী ভর্তি হওয়ার কথা ১ হাজার। এখানে ভর্তি দিচ্ছে চার-পাঁচ হাজার। মানুষ সেবাটা কীভাবে পাবে বলেন। এক বেডে দুই তিন জন। এগুলো প্রিন্সিপালের পরিপন্থি না? একবেডে তিনজন রোগী হলে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ইনফেকশন ছড়ায়।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। সিলেটের একজন ডাক্তার মারা গেলেন। এতে ডাক্তারদের মনোবলকে প্রচণ্ড আঘাত করেছে। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ সম্মুখ সারির যোদ্ধা। ফলে তাদের সুরক্ষা দেওয়া এবং সবাইকে উজ্জীবিত করা দরকার।

তিনি বলেন, ডাক্তারদের জন্য এক বা দুই লাখ বেশি টাকা না। তাদের সম্মান দরকার। কর্মবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। হাসপাতালে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ডাক্তারেদর উপস্থিতির তালিকা তৈরি করে নিয়ে যায়, এগুলোতে কিন্তু কর্মস্থলে বিরাট প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে প্রশাসনের লোকজন পিপিই পরে ফেসবুকে ছবি দেবে কিন্তু সুরক্ষার অভাবে চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারবেন না, তা হতে পারে না।

বেশি কথা না বলে যা সামর্থ আছে তা দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রণকৌশল সাজাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে আহ্বান জানান তিনি।

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাশ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত  ৯০ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন আইসিইউতে রয়েছেন। হাসপাতলে ভর্তি রয়েছেন ৫২ জন। সুস্থ হয়েছেন তিনজন। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৩ জন। মৃত্যু হয়েছে একজনের।

অন্যদিকে, শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৫৪ নার্স আক্রান্ত হয়েছেন বলে সোসাইটি ফর নার্সেস ফর সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ জানিয়েছেন।



ঢাকা/নূর/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ