মারা গেছে ভেবেই আদুরীকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় গৃহকর্ত্রী
|| রাইজিংবিডি.কম
আদুরী
তানজিনা ইভা
ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর : আদুরী কথা বলছে আস্তে আস্তে। জানালো- কাজ করতে না পারলেই মারতো গৃহকত্রী। ব্লেড দিয়ে হাত ও শরীর কেটে দিত, গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো গৃহকর্ত্রী নদী।
শুধু নদী একা নয়- তার বড় মেয়ে উষ্ণতা, বোন পুষ্পিতা এবং নদীর মা। সবাই মিলে আদুরীকে নির্যাতন করে আসছিলো দিনের পর দিন।
সারাদিনে খাবার দিতো একবেলা। খাবার আর পুষ্টির অভাবে কঙ্কালসার হয়ে পড়ে ছোট্ট এই মেয়েটি। নির্যাতনের পর কঙ্কালসার দেহটি রাতের অন্ধকারে ডাস্টবিনে ফেলে যায় গৃহকর্ত্রী নদী নিজেই। গৃহকত্রী ভেবেছিল মেয়েটি হয়তো মারা গেছে।
রাজধানীর পল্লবী এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে গত সোমবার সকালে আদুরী নামের এই মেয়েটিকে উদ্ধার করেছিলেন লিলি আক্তার নামের এক কোমল হৃদয়ের অধিকারিনী। পরে খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ তাকে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-ওসিসিতে তার চিকিৎসা চলছে।
তবে আশার কথা -হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদুরীর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছে। গঠন করেছে মেডিকেল বোর্ড।
দশ বছর বয়েসী আদুরী গৃহকর্মী। পাঁচ বোন, ৪ ভাইয়ের মধ্যে আদুরী মা-বাবার সপ্তম সন্তান। বাবা খালেক মৃধা তিন বছর আগে মারা যান। পেটের দায়ে এক বছর আগে এই শিশুটি পটুয়াখালির গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে কাজ করতে।
আদুরীর মা সাফিয়া বেগম জানান, তাঁর স্বামী আব্দুল খালেক মারা যাওয়ার পর অনটনের সংসার আর টানতে পারছিলেন না তিনি। খাবারের অভাবে ছোট্ট মেয়েটিকে কাজে লাগিয়ে দেন অন্যের বাসায়।
তিনি আরো জানান, গ্রামের চুন্নু মিয়া আদুরীকে তাদের বাসায় কাজে দেয়ার জন্য বলেন। চুন্নু মিয়া প্রথমে বরিশালের শায়েস্তাবাজার এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে কাজে দেয় আদুরীকে। সেখানে এক বছর কাজ করার পর চুন্নু মিয়া ঢাকার পল্লবীতে তার শ্যালক সাইফুলের বাসায় দিয়ে যান। এরপর থেকে আদুরী পল্লবীতে সাইফুলের বাসায় কাজ করতো।
আদুরীর মা আরও জানান, এক বছরের মধ্যে শুধু রমজান মাসে একবার মোবাইলে কথা বলেছি আদুরীর সঙ্গে। যোগাযোগ করতে চাইলে তারা যোগাযোগ করতে দেয় নি, বলে অভিযোগ করেন আদুরীর মা।
সাইফুল ইসলামের পেশা যে কী তা আদুরীর কাছে অস্পষ্ট। সে ভালো করে বলতে পারে না সাইফুল ইসলাম কী করেন। আদুরী জানায়, সাহেব (সাইফুল) খুব একটা বাসায় আসত না। অনেক দিন পর মাঝেমধ্যে বাসায় এলেও নদীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে আবার চলে যেত। তার রহস্যজনক পেশা এবং আসা-যাওয়া নিয়ে পুলিশও সন্দিহান।
এদিকে গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পল্লবীর সাগুফতা বাড়ি কল্যাণ সমিতির ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১ সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলা থেকে নদীকে আটক করা হয়। পল্লবী থানা পুলিশ তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আদুরীর খালু মিজান জানান, আদুরীকে কাজে দেয়ার পর থেকে কয়েকবার সাইফুল ও তার স্ত্রী নদী ঢাকার বাসায় রেখেই পটুয়াখালির বাড়িতে যান। সেখানে আদুরীর মা তার মেয়েকে দেখতে চাইলে নদী ও সাইফুল জানান, সামনের কোরবানীর ঈদে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর থেকে তারা আদুরীর খোঁজখবর জানতেন না।
বৃহস্পতিবার তার মা জানতে পারেন আদুরীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আদুরীর শারিরীক অবস্থা প্রথম দিনের তুলনায় এখন একটু ভালো বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, “আদুরীর উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে তা সত্যিই অমানবিক। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার জন্যে যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই আমরা করবো।”
গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতন
৩ দিনের রিমান্ডে গৃহকর্তী নদী
রাইজিংবিডি / ইভা / এএম
রাইজিংবিডি.কম