ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

পুলিশ ইন্সপেক্টর হতে চায় আদুরী

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৮ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুলিশ ইন্সপেক্টর হতে চায় আদুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্যাতনের মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আদুরী বলেছে, এই রায়ে সে খুশি। রায় শুনে তার ভালো লাগছে। সে জানিয়েছে, পড়ালেখা করে বড় হয়ে সে পুলিশ ইন্সপেক্টর হতে চায়।

মামলার রায় উপলক্ষ্যে পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছে আদুরী, তার মা, মামা, খালাসহ কয়েকজন। আদুরী এখন পূর্ব জৈনকাঠি সালিহা দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে।

আদুরীকে নির্যাতনের মামলার রায়ে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীর (৩০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা আনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার এ রায় ঘোষণা করেন।

তাকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সে চিত্র তুলে ধরে আদুরী  বলেছে, ‘আমাকে সব সময়ই কারণে-অকারণে মারধর করতো। ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিত, আগুন দিয়ে জিহ্বা পুড়িয়ে দিয়েছে। ব্লেড দিয়ে হাত-পা কেটে দিয়েছে। আমাকে বাসি, পচা ভাত দিত, তার মধ্যে অনেক লবণ দিয়ে রাখতো। আদা বাটা, রসুন বাটাও জোর করে খাওয়ানো হতো।’

এখন কেমন আছো জানতে চাইলে আদুরী বলে, ‘সারা শরীরে ব্যথা করে। ভাত খেতে পারি না, গলা ও পেট জ্বলে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে তাকে (নদী) এখনো দেখি, সে আমাকে মারছে। ঠিক মত ঘুমাতে পারি না।’

জিহ্বা পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে আদুরীর স্পষ্ট করে কথা বলতে কষ্ট হয়।

আদুরীর মা সাফিয়া বেগম বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা সঠিক বিচার পাইছি। তয় ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। ধার দেনা করে আদুরীর চিকিৎসা করাতে হয়। শাক-সবজি বেঁচে, পরের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আদুরীর জন্য এখনো ওষুধ কিনতে হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন একটি ডাস্টবিনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায় গৃহকর্মী আদুরীকে। উদ্ধারের সময় তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ছিলো। মারধর, গরম খুন্তি ও ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, ব্লেড দিয়ে শরীর পোঁচানো, মাথায় কোপ, মুখে আগুনের ছ্যাঁকা, খেতে না দেওয়া কিছুই বাদ যায়নি।

এই ঘটনায় ২৬ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় আদুরীর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের ভগ্নিপতি চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করা হয়।

প্রায় দেড় মাস আদুরীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময়ও সে ভালোভাবে কথা বলতে পারতো না। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ৭ নভেম্বর সে পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নে তার গ্রামের বাড়ি চলে যায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুলাই ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়