কলিমুল্লাহর বক্তব্য ভিত্তিহীন: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। এর জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বক্তব্য ভিত্তিহীন।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লা সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তার বক্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য নিম্নরূপ:
১। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাবর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ইউজিসি তাদের নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায়। ইউজিসি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই এ প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সাহেবের অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২। কলিমুল্লাহ সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন, যা নিতান্তই অনভিপ্রেত। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে যে সভায় মন্ত্রীর দেরিতে উপস্থিতি বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, সে সভাটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সকালে হওয়ার কথা থাকলেও পরে সভার সময় পরিবর্তন করে বিকেলে করা হয়। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা থাকায় এবং সে সভাটি উপাচার্য মহোদয়দের সঙ্গে আলোচনার আগে হলে ভালো হয় বিবেচিত হওয়ায় উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে সভার সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকার সভাটি নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক প্রলম্বিত হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মহোদয়, সচিব মহোদয় এবং ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়সহ প্রতিনিধিদের উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় যোগ দিতে দেরি হয়। মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত সকলের কাছে অনিচ্ছাকৃত এই বিলম্বের জন্য বিশেষভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। মন্ত্রী মহোদয়ের সময়ানুবর্তিতার বিষয়টি সবার কাছে সুবিদিত। তিনি সময়মতো সব সভায় অংশ নেন। সেদিনের সবারই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকই নয়, নিতান্তই রুচি বিবর্জিত।
৩। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনার জন্য একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রীর বাণী চাওয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন চলছিল। সে পরিস্থিতিতে মন্ত্রী বাণী দেওয়া সমীচীন মনে করেননি। এর পরে গত এক বছরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রীর কাছে আর কোনো বাণী চাওয়া হয়নি।
৪। কলিমুল্লাহ উপরোক্ত বিষয়গুলোর বাইরেও মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে রাজনীতিকে জড়িয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন, যার সাথে মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকায়, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে।
৫। কলিমুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যেসব বক্তব্য রেখেছেন, সেসব বিষয়ে এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ, তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। সে বিষয়ে শিগগির মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা হবে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় জনাব কলিমুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া অন্যান্য সব বক্তব্য সম্পর্কে মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন প্রাপ্তি ও বিবেচনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় বক্তব্য উপস্থাপন করবে।
ঢাকা/হাসান/রফিক