ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

শুধু শারীরিক গঠন দিয়ে লিঙ্গ নির্ণয় করা যায় না: হো চি মিন

বিশাখা বনলক্ষ্মী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৮ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:১৭, ৮ মার্চ ২০২১

২৬ বছরেও সমাজের গা থেকে শুকায়নি ইয়াসমিন নামের ক্ষতটির। শুধু ইয়াসমিন নয় দগ দগ করছে তনু, মিতু, রাহেলাসহ আরও কত শত ক্ষত। বাদ যায়নি ৫ বছরের পুজারাও।  যে সমাজে নারীকে গিলে খেতে হা করে আছে হাজারও হায়েনা, এমন সমাজেই নিজেকে নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন কেউ কেউ।  

গতিশীল পৃথিবীর অনেক কিছুই পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে বসুন্ধরার উপদানগুলো। অনেক কিছুই করা হচ্ছে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে। কিন্তু একজন মানুষ যখন তার জন্মগত শারীরিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে তখন তাকে মেনে নিতে পারছে না সভ্য সমাজের নারী-পুরুষ। প্রাণহীন রোবট সোফিয়াকেও নাগরিকত্ব দিয়েছে কয়েকটি দেশ।  অথচ হতবাক হতে হয় প্রাণবিক মানুষ—ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়াদের নাগরিকত্ব পেতে করতে হয়েছে আন্দোলনও এবং অনেক দেশে করতে হচ্ছে 

বৈষম্যে ভরা এই পৃথিবীতে কত রকমের অধিকার আদায়ের আন্দোলন আজও চলছে। তার মধ্যে একটি হলো—প্রকৃতির দেওয়া শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন ও পছন্দ অনুযায়ী জেন্ডার স্বীকৃতির আন্দোলন।

আরো পড়ুন:

ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হো চি মিন ইসলাম। নিজেকে নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অথচ করোনা মহামারিতে যখন কিছু সংখ্যক চিকিৎসক-নার্সরা চিকিৎসা না করার বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছিলেন, কেউ কেউ চাকরিও ছেড়েছিলেন, তখন হোচিমিন দেশের বাইরে থেকে ফিরে এসেছিলেন আক্রান্তদের সেবা করতেই। স্টাফ নার্স হিসেবে কাজ করেছেন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিউতে।  বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এ মাস্টার্সে অধ্যায়ন করছেন। এছাড়া নো পাসপোর্ট ভয়েস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গুড উইল অ্যাম্বাসেডরও তিনি।

স্রোতের বিপরীতে চলা রূপান্তরিত এই নারীর প্রশ্ন—নারীর সংজ্ঞা কী? শুধু শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করেই একজন মানুষ নারী না পুরুষ—¬তা নির্ধারণ করা যায় না। তিনি বলেন, ‘শুধু শরীর দিয়ে কোনো মানুষ চলতে পারে না। শরীর ও মন মিলিয়েই একজন মানুষ। মন বাদ দিয়ে একজন মানুষকে ভাবতে পারেন না।’ তাই ২০২১ সালে এসে নারীর প্রচলিত সংজ্ঞা বা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছেন তিনি।

হো চি মিন বলেন, ‘শুধু স্তন ও যৌনাঙ্গের ওপর নির্ভর করে আপনি একজনকে নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন না। আরও অনেক ব্যাপার আছে, সেটাকে চিন্তা করতে হবে। আমি নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার বা অন্য যেকোনো কিছু হই না কেন, সেটা আমি নিজেই বলতে পারি। সমাজ রাষ্ট্র বা অন্য কেউ আমাকে সেটা বলে দিতে পারে না আমি কী।’ 

নারীত্ব ও মাতৃত্বের সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আরও বলিষ্ঠ মন্তব্য করেন রূপান্তরিত এই নারী। মাতৃত্বের প্রচলিত ধারণা নিয়ে পোষণ করেন দ্বিমত।  তিনি বলেন, ‘মাতৃত্ব হলো প্রকৃতি।  যে কেউ মা হতে পারেন।  মাতৃত্ব যে কেউ ধারণ করতে পারে।  শুধু আমার পেট বা জরায়ু থেকে সন্তান প্রসব করাই যদি মাতৃত্ব হয়, তবে মাতৃত্বের সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। ’  
একজন মানুষ তার জেন্ডার সত্তাকে যেভাবে অনুভব করেন বা ভাবতে পছন্দ করেন সেভাবেই তিনি বাঁচতে চান। যদি সেখানে কোনো বাধা দেওয়া হয় তাহলে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সে বাধা কোনো ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র যেই দিক না। শুধু শারীরিক গঠন গতানুগতিক না হলে অথবা আলাদা হলেই মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না।

একজন সুনাগরিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন ট্রান্সজেন্ডাররা। এখনো সুব্যবস্থা নেই শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের। ২/১ জন কোনো রকমে লেখাপড়া করতে পারলেও চাকরি পেতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ।

শুধু নারী ও পুরুষ এর বাইরের অন্য লিঙ্গের মানুষই নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন তা নয়। যতদিন মানুষকে হিসেবে সম্মান বা মর্যাদা না দিয়ে শুধু নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার বা অন্য কিছু হিসেবে দেখা হবে ততদিন নির্যাতন, বৈষম্য থাকবেই। তবে শুধু ধরনটাই আলাদা হবে।  হো চি মিন বলেন, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী।  আবার যারা নারী ও পুরুষের বাইরের অন্য লিঙ্গের মানুষ তাদের অধিকার খর্ব করছে এই নারী ও পুরুষ একত্রিত হয়ে।

সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র পরিবর্তনকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কিন্তু একটি উন্নত সমাজ বা রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই প্রত্যেক ব্যক্তির অস্তিত্বকে স্বীকার করতে হবে। এখানে একজন ব্যক্তি কোন লিঙ্গের তা বিবেচ্য বিষয় নয় বলেই মনে করেন রূপান্তরিত নারী হো চি মিন।

ঢাকা/এসএন    

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়