ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের এক মডেলের গল্প

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৬ মে ২০২১   আপডেট: ১৭:৩৩, ৬ মে ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের ভাস্কর্যটির নাম অপরাজেয় বাংলা। এই ভাস্কর্যের নির্মাতা হচ্ছেন শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক এই ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি।  নির্মাণকাজ শেষে এর উদ্বোধন করা হয় ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবসের দিন।

অপরাজেয় বাংলা এই ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছেন তিনজন মডেল। এদের দুজন পুরুষ আর একজন নারী। পুরুষ চরিত্রের একজন হচ্ছেন গ্রামের যুবক।  লুঙ্গি পরে রাইফেল কাঁধে যিনি মুক্তযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।  অন্যজন হলেন শহুরে যুবক।  তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। এদের মতো লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা।

আরো পড়ুন:

কেবল পুরুষরাই মহান এই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।  অনেক নারীরাও সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। কেউ যুদ্ধ করেছেন, কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। অনেকে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রুষা  করে ভালো করে তুলেছেন।  সুস্থ হয়ে সেসব মুক্তিযোদ্ধারা আবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর।

প্রতীকী অর্থে গ্রামের একজন, শহরের একজন মুক্তিযোদ্ধা আর একজন সেবিকা নারীকে অবলম্বন করে এই অসাধারণ ভাস্কর্যটির কাজ মাত্র দশ মাসের মধ্যে শেষ করেন শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন শিল্পীসহ মডেল তিনজনও।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই তিনজন মডেল শিল্পীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। শিল্পী তাদের দেখে, গায়ে-মুখে হাত বুলিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একে একে তিনজনের অবয়ব।

অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে চির অমর হয়ে থাকবে বাঙালি জাতীর কাছে।  এই ভাস্কর্যের শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকেও বাঙালি  জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে আজীবন।  কেবল এই ভাস্কর্য আর ভাস্করই নন।  এই ভাস্কর্যের তিনজন মডেলের কথাও আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

তিন মডেলের প্রথমজন (নারী সেবিকা) হাসিনা আহামেদ। আজ থেকে অনেক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে চলে গেছেন কানাডায়। তিনি ওখানেই আছেন স্বামী-সন্তানদের নিয়ে। মাঝের জন (গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা যুবক) বদরুল আনাম বেনু।  বর্তমানে কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কেউ তার সঠিক সন্ধান দিতে পারেনি।  ডানেরজন (শহুরে মুক্তিযোদ্ধা যুবক) সৈয়দ হামিদ মাকসুদ।

১৯৭৯ সালে যখন অপাজেয় বাংলা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তখন সৈয়দ হামিদ মাকসুদ মাত্র ২৭ বছরের যুবক। গ্রামের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ তার বড় চাচার ছেলে। শিল্পী বড় ভাইয়ের অনুরোধে তিনি তখন ভাস্কর্যের মডেল হতে রাজি হন। দীর্ঘসময় এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা, বিরক্তিতে আচ্ছন্ন হওয়া, বড় ভাইয়ের কারণে লেগে থাকা, ক্রমে এই ভাস্কর্যের প্রতি মায়া জন্মানো- এরকম অনেক গল্প রাইজিংবিডির পাঠকদের শুনিয়েছেন এই মডেল সৈয়দ হামিদ মাকসুদ। বর্তমানে ঢাকার এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা তিনি।  ৬৯ বছর বয়সী তার দিন কাটে পাখি পালন করে।  হরেক রকমের পাখিদের নিয়েই তার পৃথিবী।

মেসবাহ/সাইফ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়