‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে’
ফাইল ছবি
‘লোকসান কমাতে’ দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে পরিবহন খরচ, হোটেল-রেস্তোরার খাবার এবং তৈরি খাবারের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বাড়বে। গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়বে হোটেল ও রেস্তোরাঁর পণ্য ও সেবার দাম। এমনকি দ্রব্যমূল্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, চিনি, ময়দা, আটাসহ এ খাতের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে গত কয়েকদিনে। এসব বিষয়ে ৫দিন আগেও আমরা জরুরি সভা করেছি। সমিতির মতামত হচ্ছে, বর্তমানে এই খাত অনেকটাই নির্যাতিত খাতে পরিণত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে শিগগিরই আবার বৈঠকে বসবো আশা করি, নেতাদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, হোটেল শ্রমিকরা গত ২ বছর ধরেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে নতুন এই ঘোষণা আমাদের আরও সমস্যায় ফেলবে।
তিনি বলেন, গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর সরকারের নির্দেশে যখন হোটেল বন্ধ হয়ে শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। তখন শ্রমিক ও শিল্প রক্ষায় আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ সারাদেশে সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। চলতি বছরেও শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ১২ জুলাই বিভিন্ন মন্ত্রীসহ জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এমনকি জাতীয় ফেডারেশনের মাধ্যমে দুইবার সরকার ঘোষিত অনুদানের জন্য করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অতি সংক্ষিপ্ত তালিকা সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন হোটেল শ্রমিকও নগদ অনুদান পাননি। আমরা সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত অনুদান ও প্রণোদনা প্যাকেজে হোটেল শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মালিকপক্ষ লোকসান কমাতে যদি শ্রমিক ছাঁটাই করে, তাহলে আমাদের বাচার উপায় থাকবে না আর।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ-এর সাথে আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি, তারা আমাদের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা চিঠি আকারে চেয়েছেন। আমরা আজই চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে আমরা সভা করেছি। সভায় সবাই মতামত দিয়েছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই। সমিতির মতামত মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করব এবং মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।
প্রসঙ্গত, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুধবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকরও হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় ‘লোকসান কমাতে’ দেশের বাজারেও এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েলে লিটারপ্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রয় করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে।
হাসান/এসবি