গণপরিবহন ধর্মঘট: যাত্রী ভোগান্তি চরমে
মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) শুরু হওয়া গণপরিবহন ধর্মঘটের আজ দ্বিতীয় দিন। গতকাল সরকারি ছুটির দিন থাকলেও শনিবার (৬ নভেম্বর) বিভিন্ন বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় রাস্তায় বের হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
শাহবাগ, ফার্মগেট, আজিমপুর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কয়েক হাজার নারী-পুরুষ রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। যাদের অফিস কাছে, তারা বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও রিকশায় যাচ্ছেন। যাদের গন্তব্য দূরে, তারা নিয়মিত বাসে গেলেও আজ সিএনজি-অটো ভরসা। সেখানেও তারা দাম হাঁকাচ্ছেন প্রায় দ্বিগুণ।
শাহবাগ থেকে মহাখালী ডিওএইচএস যাবেন মতিউর রহমান। ওখানকার একটা বাইং হাউজে কাজ করেন তিনি। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও বিআরটিসি বাসে উঠতে না পেরে পাঠাও বাইকের দ্বারস্থ হলেন। মতিউর রহমান বলেন, বাস নেই বলে যার যেমন খুশি দাম চাইছে। অটো চাইলো ২৫০ টাকা, পাঠাও চাইছে ১৫০ টাকা। কী করবো বলুন?
কথা হয় শাহবাগ এলাকায় অপেক্ষারত কয়েকজন পাঠাও চালকের সঙ্গে। এদের একজন ভোলার আনসারী বলেন, গত দুদিন বাস বন্ধ থাকায় যাত্রী বেশি পাচ্ছি। আমাদের আয় একটু বেড়েছে। তবে ভাড়া অন্য সময়ের মতোই নিচ্ছি।
নড়াইলের আসিফ বলেন, ব্যবসা করতাম। করোনায় সব শেষ। এখন ৩-৪ মাস থেকে রাইড শেয়ার করছি। কালকের চেয়ে আজ যাত্রী বেশি। আমরাও খুশি। আশা করছি কাল (রবিবার) অফিস-আদালত খুললে যাত্রী আরও বাড়বে। তবে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন না বলেও দাবি করেন আসিফ।
দিনাজপুরের এরশাদ মিয়া রিকশা চালান প্রায় ৩ বছর ধরে। তিনি বলেন, আজ যাত্রী বেশি। তাই আয়ও বেশি হচ্ছে। বেশি সুবিধা হচ্ছে, বাস না চলাতে আমরা সব রাস্তায় চলতে পারছি। ট্রাফিকরা কিছু বলছেন না।
গাজীপুরের নজরুল ইসলাম রিকশা চালান ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বেশি টাকা দিয়ে চলতে হচ্ছে। ভাড়া একটু বেশি নিলেও কারো প্রতি জুলুম করছি না।
গুলিস্তান থেকে মিরপুর, গাবতলী এবং এয়ারপোর্ট রোডে বেশ কিছু বিআরটিসি বাস চলতে দেখা গেছে রাস্তায়। তবে সেসব বাসে বয়স্ক, শিশু এবং নারীরা ভিড়ের কারণে কোনোভাবেই উঠতে না পেরে অগত্যা রিকশা বা অটোতে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। এমন এক পরিবারের কর্তা বলেন, ছেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য বের হয়েছি। পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিন্তু বাসায় যাবার কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। শ্যাওড়াপাড়া যেতে অটো চাচ্ছে ২৫০ টাকা। অন্য সময় হলে ১৫০ টাকায় যেতে পারতাম। আমাদের কষ্টের আর সীমা নেই।
রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন কাজে বের হওয়া যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। অল্প দূরের যাত্রীরা বিভিন্ন পরিবহনে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। যদিও এর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের। যাদেরকে বেশি দূরে যেতে হবে, তাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। যাত্রাবাড়ী থেকে বয়স্ক স্ত্রীকে নিয়ে পিজি হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে এসেছেন ফয়েজ উদ্দিন। এখন ফিরে যাবেন। কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। রিকশায় চায় ২০০ আর অটোতে চায় ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, বাবা কী করবো বলুন? এটা আমাদের মতো গরীবদের জন্য একটা জুলুম। কে দেখবে এসব?
যারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন বা বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে যাবেন, তাদের কষ্ট আরও সীমাহীন। এসব দূরপাল্লার যাত্রীদের একমাত্র ভরসা ট্রেন। তাই অন্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রেলস্টেশনে ভিড় বেড়েছে যাত্রীদের। যাত্রীদের অনেক বেশি চাপ সামাল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার বলেন, ‘যাত্রীর যত চাপই হোক, আমরা সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত বগি লাগানো হবে, যাতে যাত্রীরা নিরাপদে এবং অল্প খরচে তাদের গন্তব্যে যেতে পারেন।’
/এনএইচ/