ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২১ ১৪৩১

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাত ও কৃষিতে গুরুত্ব দিন: সিপিডি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৩ এপ্রিল ২০২২  
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাত ও কৃষিতে গুরুত্ব দিন: সিপিডি

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি কম আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদেরও কষ্টকর অবস্থায় ফেলেছে বলে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এসময় ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি আগামী বাজেটে খাদ্যে, রপ্তানি শিল্পে প্রণোদনা দেওয়া এবং শ্রমিকদের হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনা, প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে গবেষণা সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পশাপাশি সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি আরও বাড়ানো এবং শিশুদের নিরাপত্তায় আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি‘র পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষিতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজেটে কিভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তিতে রাখা যায় সে বিষযে সরকারের নজর দিতে হবে।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলনীয় না কিন্তু শিক্ষণীয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। তাই আমাদের বাজার ভিত্তিতে ঋণ আনতে হবে। নতুন নেওয়া ঋণগুলো কোন সময় দিতে হবে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোকে সাশ্রয়ী সময়ের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে তারা।’

মূল্যস্ফীতি বাস্তবসম্মত রাখার পরামর্শ দিয়ে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন আগামী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিনলাখ টাকা এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদী হবে না। দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সবুজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।’

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১ শতাংশ কমে গেছে। অথচ অন্য এলডিসির ৩০টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অনেক পণ্য আছে যেগুলোর ব্যবহার ক্ষতিকর। সেগুলোর কর বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সিগারেট। সিগারেটের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ সারচার্জসহ ৫০ শতাংশ ট্যাক্স বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি সফট  ড্রিংকস স্বাস্থ্যখাতের কোন উপকার আসে না বরং ক্ষতি করে। ফলে এই খাতে ট্যাক্স বাড়ানো এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন যেগুলো মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে, এটার ট্যাক্স কমাতে হবে।’ 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হিসাবটি সঠিকভাবে করতে হবে। সঠিক তথ্যগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বড়বড় প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার কারণে দুর্নীতি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যয় বাড়লে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো লাভজনক নাও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর, জিডিপির রেশিও বাড়ার পরিবর্তে তা কমছে। এটা কোভিডের আগে কর জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও বর্তমানে তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপির আকার বাড়লেও কর আদায় কমছে। এটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি তার চেয়েও বেশি বাড়ছে। এতে করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। বাজেটের মূল দর্শন হতে হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কিভাবে আয় বাড়ানো যায়।’

অনুষ্ঠানে সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে আমরা গত কয়েকবছর ধরেই কথা বলছি। বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়েছে আমদানি রপ্তানির আড়ালে। এবারের বাজেটে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি সর্তক থাকতে হবে। পাশাপাশি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নির্বাচনের বছর এসে যেন সরকার কর ও ঋণ খেলাপিদের কোনো ধরনের সুবিধা না দেয়।’

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে অব্যাহত থাকতে পারে এবং জুলাই মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথমদিকেও থাকতে পারে। এসব বিবেচনায় সিপিডি অত্যাবশকীয় পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সেইসঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছে।’

হাসনাত/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়