ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

‘চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমবে’

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২  
‘চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমবে’

উদ্বোধন করা হলো দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

দেশের মানুষকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে উদ্বোধন করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আওতাধীন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। দেশের স্বাস্থ্যখাতে এটি একটি বৈপ্লবিক দিগন্তের সূচনা। বক্তারা বলেছেন, এই বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর পর চিকিৎসার উদ্দেশে বিদেশে পাড়ি জমানো রোগীদের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার পরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দেশের প্রথম সরকারি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি চিকিৎসা খাতে আমরা যেসব সুবিধা দিয়েছি, তা কাজে লাগাতে হবে। এ হাসপাতালের মতো দেশের সব বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল করা হবে। সেসব হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা ও শিক্ষার মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ১৮ হাজার চিকিৎসক, ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৪৭ হাজার নার্স মানুষের সেবা দিচ্ছে। ডিপ্লোমা নার্সদের মর্যাদাও বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নারী এবং শিশুদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সব সুযোগ-সুবিধার পরও উপজেলা-জেলা পর্যায়ে সরকারি চিকিৎসকরা থাকতে চান না, এটা ঠিক নয়। বর্তমানে সবকিছু আধুনিকায়ন করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়েছে। এসব কিছুকে চিকিৎসকরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেন এবং নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকবেন বলে আশা করছি। 

বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আমাদের দেশে এনে তাদের এবং আমাদের দেশের চিকিৎসকদের কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যও বলেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের দেশের চিকিৎসকদের এক্ষেত্রে আরও উদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে সেন্টার বেইজড চিকিৎসাসেবা পদ্ধতি চালু আছে। বাংলাদেশে এটাই প্রথম সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এই স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট ৩০০ চিকিৎসক ও ১২০০ স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করবেন। উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৮০ জন চিকিৎসকসহ মোট ১৪০ জন নার্স ও কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২ জন চিকিৎসকসহ ৪৬ জন কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই হাসপাতাল করার জন্য অর্থ ঋণ দিয়ে সহায়তা প্রদানের জন্য কোরিয়ান সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ছয়টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে চলা এ হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরীয়ান কনসালট্যান্টও সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করবেন। 

স্বাগত বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এরমধ্যে হাসপাতালটির শতভাগ অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। ফাইভস্টার মানের বিশেষায়িত এ হাসপাতালে থাকবে আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানান সুবিধা। আর খরচও থাকবে সাধারণের নাগালে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

উপাচার্য বলেন, ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটির রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে থাকবে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ছয়টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে আটটি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি-স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে রয়েছে অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার। এছাড়া, রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার রয়েছে।

এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, রোবোটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থাও রয়েছে। হাসপাতালে সুন্দর পরিবেশের জন্য রয়েছে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। পাশাপাশি উন্নতমানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক এবং ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউনসহ বিএসএমএমইউ'র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 

ঢাকা/মেসবাহ/ইভা 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়