ঢাকা     রোববার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৪ ১৪৩১

বিনম্র শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২  
বিনম্র শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ 

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মসমর্পণ শুরু করে এবং পাকিস্তানিরা যখন তাদের অনিবার্য পরাজয় উপলব্ধি করে তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মেধাবী মানুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাঙালি জাতি যাতে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা করে হত্যা করা হয়।

ইতিহাসের সেই দিনে আজ ১৪ ডিসেম্বর প্রতি বছরের মতো এবার বিনম্র শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে জাতি। বুধবার রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দিবসটি উপলক্ষে মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি, পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে তারা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

পরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এখানে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ডা. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সকাল সোয়া ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকা ছেড়ে গেলে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সংগঠনের নেতারা শহিদদের স্মৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আক্তারুজ্জামান সাংবাদিককের প্রশ্নের   জবাবে বলেন, নিহতদের প্রকৃত তালিকা আছে। এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। আরও খুঁজে বের করা উচিত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি এলাকা সেদিন আক্রান্ত হয়েছিল। সেদিন এই ক্যাম্পাসে একটি জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছিল। বিশ্ব সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির জন্যই এটি জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

এদিকে, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবত অর্পণ করেন।

একাত্তরের এইদিনে অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখকসহ মাটির দুই শতাধিক কৃতি সন্তানকে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর চোখ বেঁধে নিজ নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। প্রথমে তাদের চোখ বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশাপাশি রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তাদের শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন। সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি ও সংগঠন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফুলের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান।

রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আদর্শের ওপর আঘাত হানতে চাইছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক‌্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। এদিন সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দিবসটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।

/পারভেজ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়