সুরক্ষা অ্যাপ অপ্রস্তুত রেখেই চলছে চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী টিকার চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে চতুর্থ ডোজের বিষয়ে কোনো অপশন তৈরি করা হয়নি। যে কারণে টিকা নিতে আসা মানুষের হাতে থাকা টিকা কার্ডেও চতুর্থ ডোজের উল্লেখ নেই।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার পরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
কুর্মিটোলা হাসপাতালে দেখা গেছে, সুরক্ষা অ্যাপে চতুর্থ ডোজের বিষয়ে কোনো অপশন না থাকায়, টিকা নিতে আসা মানুষের নিবন্ধন কপির (পুরোনো কপি) অপরপ্রান্তে টিকা কর্মীরা সিল দিয়ে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন। টিকা গ্রহীতাদের নাম ও নিবন্ধন নম্বর লিখে রাখছেন অন্য একটি খাতায়।
এ প্রসঙ্গে কুর্মিটোলা হাসপাতালের দায়িত্বরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার জানান, টিকার চতুর্থ ডোজ শুরু হলেও সুরক্ষা অ্যাপ এখনও প্রস্তুত হয়নি। তাই যারা টিকা নিতে আসছেন, আপাতত তাদের কার্ডের পেছনে লিখে দেওয়া হচ্ছে। সুরক্ষা অ্যাপে চতুর্থ ডোজের অপশন যখন চালু করা হবে, তখন আমরা টিকা নেওয়া মানুষের ডাটা আপডেট করে নেব।
এদিকে কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে আসা মানুষের তেমন ভিড় নেই। এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন স্বেচ্চাসেবক বলেন, টিকার যে চতুর্থ ডোজটা শুরু করা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে মানুষ এখনও ততটা জানে না। এই খবরটা এখনও জনসাধারণের কাছে তেমনভাবে পৌঁছায়নি। এখনও কাউকে এসএমএস দেওয়া শুরু হয়নি।
টিকার খোঁজ নিতে আসা বাড্ডার বাসিন্দা মিন্টু আনোয়ার বলেন, সুরক্ষা অ্যাপে তো কোনো অপশন পেলাম না। তাহলে এই চতুর্থ ডোজ দেবো কিভাবে? এসএমএস কি পাঠানো হবে?
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, চতুর্থ ডোজের জন্য সুরক্ষা অ্যাপে এখনও সিস্টেম আপডেট হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইটি বিভাগ কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হবে।
তাহলে এখন মানুষ কী করে চতুর্থ ডোজ টিকা নেবেন? জবাবে তিনি বলেন, আপাতত যারা টিকা নিতে আসছেন, তাদের টিকা কার্ডের উল্টা পাশে বা অন্য একটি কাগজে চতুর্থ ডোজের তারিখ, টিকার নাম লিখে সিল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রেও সেসব তথ্য লিখে রাখা হচ্ছে। যখনই সুরক্ষা অ্যাপ রেডি হবে, তখনই সেগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে আপলোড করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, আইটি বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করে আমরা খোঁজ রাখছি। সুরক্ষা অ্যাপ আপডেট করতে ৪ থেকে ৫দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। আপাতত আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ডা. শামসুল হক বলেন, যারা ইতিমধ্যে করোনার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তারা অ্যাপে নিবন্ধিত আছেন। তাদের নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। শুধু পুরোনো নিবন্ধন কপিটা নিয়ে এলেই আমরা টিকার চতুর্থ ডোজ দিয়ে দেব।
এদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আজ চতুর্থ ডোজ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে চাই। বাংলাদেশ টিকায় মাইলফলক অর্জন করেছে। এই টিকা কার্যক্রমের ফলেই আমাদের হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি কম, মৃত্যুও কম।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ১৫ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ, সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ এবং সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে তৃতীয় ডোজ দিয়েছি। এখনও আমাদের কাছে এক কোটি ৩৩ লাখ টিকা আছে। যেই টিকা আছে, এগুলো শেষ হলে আবারও টিকা আসবে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সাড়ে ১১ কোটি মানুষ আছে। পর্যায়ক্রমে আমরা সবাইকেই দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ (চতুর্থ ডোজ) দেব।
প্রথম বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) পাওয়ার ৪ মাস অতিবাহিত হলেই চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান অধ্যাপক আহমেদুল কবির।
/মেসবাহ/সাইফ/