ঢাকা     শনিবার   ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ৬ এপ্রিল ২০২৩  
প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবি

রাষ্ট্র ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ হিসেবে সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, অভিযোগ করে পত্রিকাটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।  

তারা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকারকে কলুষিত করা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার জন্য এ প্রয়াস চালানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা—এই তিন বিষয়ের বিরুদ্ধে যে কথা বলবে, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে সংসদে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে স্বাধীনতা-সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষক, সাহিত্যিক, কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দাবি জানান।

‘সম্প্রীতি বাংলাদেশে’র প্রধান পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, অবর্ণনীয় ত্যাগের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, গত ৫২ বছর ধরে এই স্বাধীনতাকে কলুষিত করার জন্য স্বাধীনতার পূণ্য ভূমিতে আঁচড় দেওয়ার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করবার জন্য কোনো-না-কোনো সময়ে কোনো-না-কোনো রূপে ষড়যন্ত্রকারীরা সব সময় সচেতন থেকেছে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা দেখেছি, উত্তরবঙ্গে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছিল তৎকালীন সময়ের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক। ঠিক একইভাবে সম্প্রতি গত ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে একটি পত্রিকার অনলাইনে অর্বাচীন সাংবাদিক, বিপথগামী সাংবাদিক, একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাংবাদিক একটি শিশুকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাঁতলো, একজন সংবাদকর্মী বা গণমাধ্যমের ছাত্র হিসেবে বলব, এটি হঠাৎ করে হয়নি। একজন মফস্বল সংবাদদাতা একটি সংবাদ পাঠিয়ে দিলেন আর সেটা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বা প্রচারিত হলো, এটি থিওরিতে পড়ে না। তার মানে, এটি ওই গোষ্ঠীর একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়েছে। আমরা সচেতন সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানোই শেষ বলে মনে করছি না। এই ঘটনাটি কিন্তু এবারই শেষ হয়নি। এটি একটি প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। সামনে নির্বাচন আসছে। শেখ হাসিনার সরকারকে কলুষিত করার জন্য, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এবং নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার জন্য এই প্রয়াস বলে মনে করি।       

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সভ্য বিশ্বে যেকোনো ধরনের সাংবাদিকতার জন্য কিছু মূল নীতি থাকে। কিন্তু, যখন কেউ হলুদ সাংবাদিকতা করেন ও অপতথ্য দেন এবং বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত হানেন, তখন সেটা দেশের সার্বভৌমত্বের ওপরেই এক ধরনের আঘাত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, প্রথম আলো এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের মুখপত্র। তারা আমাদের নাম ছাপায় না। যেখানে অন্য পত্রিকা আমাদের বিবৃতি ছাপায়।

‘ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি’র সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর প্রচারিত সংবাদকে শুধু অপসাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতা বলা যাবে না। এটির মাধ্যমে আঘাত এসেছে আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদার ওপরে। স্বাধীনতা দিবসে যেভাবে একটি খবর পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেটার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এই খবরটি করা হয়েছে অত্যন্ত উদ্দেশ্যমূলকভাবে। ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মশিউর মালেক বলেন, ‘আমি প্রথম আলো ও সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আমার চেতনা থেকে, বিবেক থেকে এই মামলা করেছি। ৩০ লাখ শহিদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছে যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে যারা কটাক্ষ করে, চেতনায় কুঠাঘাত করে, আমি বসে থাকতে পারি না। কেউ কেউ বলে, আমাকে নাকি ইন্ধন দিয়েছে। আমি কারো ইন্ধনে মামলা করিনি, বিবেকের তাড়নায় করেছি। একইভাবে খালেদা জিয়া যখন ৩০ লাখ শহিদকে কাটাক্ষ করেছিল, সেদিনও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিলাম।’

জাতীয় ওলামা সমাজের আহ্বায়ক মুফতি মাওলানা আব্দুল হামিদ সিরাজী বলেন, স্বাধীনতা দিবসে একটি শিশুকে ব্যবহার করে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলিয়েছে। একজন সাংবাদিক, কলামিস্টের ভুল হতেই পারে। কিন্তু, সে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বুঝতে হবে, সে দেশদ্রোহী। এজন্য তার বিচার হতে হবে। এ অপরাধে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

মানববন্ধনে স্লোগান ৭১, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় ওলামা সমাজ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, আন্তর্জাতিক শিল্পী সাহিত্যিক সম্মিলিত পরিষদ, বাংলার মুখ, বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগার, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ আন্তর্জাতিক পরিষদ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংঘ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম ব্রিগেড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, বিচ্চু বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যমঞ্চ, বৃত্তান্ত ৭১ ফাউন্ডেশন অংশ নেন।

পারভেজ/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়