চারুকলায় চলছে বর্ষবরণ প্রস্তুতি
চারুকলায় চলছে বর্ষবরণ প্রস্তুতি। ছবি: আবু বকর ইয়ামিন
দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আর কদিন পরই উদযাপিত হবে আবহমান বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।
১৪২৯ কে বিদায় জানিয়ে ১৪৩০ বরণে চারুকলা প্রাঙ্গণে ব্যস্ততার শেষ নেই। মূল আয়োজন চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে। তবে রমজানের কারণে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখের সকাল ৯টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের ফটক থেকে বের হয়ে শাহবাগ হয়ে টিএসসি চত্বরে গিয়ে শেষ হবে শোভাযাত্রা। এবারের প্রতিপাদ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান-‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’।
চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ঘিরে সাজ সাজ রব পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদজুড়ে। ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন অনুসঙ্গে পড়ছে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড়। কেউ নানা নকশার মুখোশ তৈরি করছেন, কেউ আবার ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। সিরামিক ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র, লোকজ কারুপণ্য তৈরি চলছে পুরোদমে।
যেহেতু এ আয়োজনে কোনো স্পন্সর নেওয়া হয় না তাই মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ মেটাতে স্টলে বিক্রি হচ্ছে কাগজের পাখি, মুখোশ, হাত পাখাসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা অনুসঙ্গ।
বাংলার ঐতিহ্য টেপা পুতুল, পোড়া মাটির ঘোড়া, মাছ, পাখিসহ সাতটি মোটিফ নির্মাণের কাজ চলছে। তালিকায় এবার যোগ হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী নীল গাই।
প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্বে থাকে চারুকলা অনুষদের দুটি ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছে ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ। অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেনের তত্ত্বাবধানে আয়োজক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন চারুকলার নতুন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও।
চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই জয়নুল গ্যালারির মুখে দেখা গেল জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতির ছবি আঁকছেন একদল শিক্ষার্থী। আরেকটি দল ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে তারা ফুটিয়ে তুলছেন মাছ-ময়ূর-পাখির মুখ, কেউবা আঁকছেন ফুল-লতাপাতাসহ নানা মোটিভ।
জয়নুল গ্যালারিতে দেখা গেলো বাঘ-সিংহ-হাতি ও পেঁচাসহ নানা কিছুর লোকজ ফর্মের মুখোশে রং করতে ব্যস্ত আরও একটি দল। জয়নুল স্কুলঘরে দেখা গেলো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মাউন্টবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট পাখি বানাচ্ছেন। একই সঙ্গে তাতে রং লাগানো হচ্ছে। সে সঙ্গে রয়েছে হাতপাখা আর চরকি।
এদিকে মাঠের মধ্যে বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ করছে মিস্ত্রি ও শিক্ষার্থীরা। এসবের মধ্যে বড় কাঠামো হবে মায়ের কোলে সন্তান, বাঘ, ময়ূর, মোরগ, ভেড়া, নীল গাই ইত্যাদির।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে উদযাপন করা হবে। এ বছর রমজানের কারণে আমরা উদযাপন অনুষ্ঠান কিছুটা সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় শুরু হবে। এটি শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে।
এদিকে নির্বিঘ্নে নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভা সূত্রে জানা যায়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করা হয়। তবে ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উৎসবের দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও প্রস্থান সম্পর্কে বলা হয়, নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।
/ইয়ামিন/সাইফ/