চিড়িয়াখানায় হাত বিচ্ছিন্ন: সাইদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পরিবার
রায়হান হোসেন, ঢাকা || রাইজিংবিডি.কম
পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে হায়েনার আক্রমণে হাত হারানো দুই বছরের শিশু মো. সাইদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় তার পরিবার।বর্তমানে শারীরিক অবস্থা কিছুটা সুস্থ হলেও শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।
হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুটির বাবা মো. সুমন মিয়া বলেন, একটি দুর্ঘটনায় আমার সাইদ পঙ্গু হয়ে গেলো। ওর এই পঙ্গু জীবন নিয়ে কী হবে? এই হাত দিয়ে আর কখনো কিছু ধরতে পারবে না। জীবনে কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ছেলে তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাত হারিয়ে ফেলছে। আমার ছেলের মতো আর কোন বাবা মায়ের সন্তানের এমন কষ্ট যেন না দেখতে হয় সেই দোয়া করি।
রোববার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) সুমন মিয়া এসব কথা বলেন।
সুমন মিয়া বলেন, আমার বাড়ি রংপুরে। পরিবারের ৫ সদস্যদের সংসার। জীবনের তাগিদে গাজীপুরে এসেছি। একটা গার্মেন্টসে দশ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে কোনমতে সংসার চলে। সাইদ আমার প্রথম সন্তান। গ্রাম থেকে ওর নানা-নানী আসছে। তাদের নিয়ে চিরিয়াখানায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে এসে আমার ছেলের হাত হারিয়ে ফেললাম।
সাইদের মা শিউলি বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাইদ আমার কোলেই ছিলো। হঠাৎ কোল থেকে নেমে খেলতে খেলতে হায়েনার খাঁচায় হাত ঢুকিয়ে দিলে হাতে কামড় বসায় হায়েনা। এ সময় আমারা ওর হাত ধরে টানাটানি করে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে সাইদের কনুই থেকে হাত আলাদা হয়ে যায়।
সাইদের মামা মো. ইউসুফ বলেন, গ্রামের বাড়ি থেকে আমার মা-বাবা ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। পরে আমার বোনসহ (সাঈদের মা) আরও কয়েকজন মিরপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। ভেতরে ঢোকার পরে সাইদ মায়ের কোল থেকে নেমে খাঁচার কাছে গেলে হায়েনা আক্রমণ করে। সাইদের ডান হাত খাঁচার ভেতর থেকে টেনে ধরে হায়েনা। পরে বাইরে থেকে টান দিলে হাত ছিঁড়ে যায়। পরে দ্রুত পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন এখানে চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের অনেক সাহায্য করছে। ওর চিকিৎসার খরচ চিড়িয়াখানা থেকে দিচ্ছে। তবে যে হাত গিয়েছে তার তো আর ফিরে আসবে না। ছেলেটা জীবনের মনে পঙ্গু হয়ে গেল।
অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) এর ডিউটি চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে আসতে কিছু রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে এখন শিশুটির অবস্থা স্বাভাবিক। আমরা আশা করি কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে তারা বাড়িতে ফিরতে পারবে।
মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বর্তমানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পড়ুন: জাতীয় চিড়িয়াখানায় শিশুর হাত খেয়ে ফেলেছে হায়েনা
/এসবি/