ভারী বর্ষণ
রাঙামাটিতে পাহাড় ধস, আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় সহস্রাধিক মানুষ
রাঙামাটি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রাঙামাটিতে টানা ভারী বর্ষণে ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ছে
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গত পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে জেলার ১৯৭টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন ও পাহাড় ধস হয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে জেলায় ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণেরও ঘর আছে ১৩টি। এসব ঘটনায় ১০ জন আহত এবং বরকল উপজেলায় একজন পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এ জেলায় ১৪টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১৬টি বিদ্যুতের খুঁটি এবং ৬৮৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ জেলার ৭৫টি স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে ৯টি স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১২৪টি ঘর ও ৫টি হাট-বাজার পানিতে ডুবেছে। বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন ও জুরাছড়ির চারটি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে বন্ধ আছে চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার। সোমবার পর্যন্ত মোট ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১ হাজার ৭২৭ জন মানুষ।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাঙামাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে যে, শহরের ভেদভেদী-রাঙাপানি সড়কের তপোবন আশ্রম সংলগ্ন রাস্তার এক পাশ ধসে পড়ে গেছে। অন্যদিকে, কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কের বরাদম এলাকাতেও পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি ইউনিয়নের দেপ্পোছড়ি এলাকায়ও মূল সড়কের পাশে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে।
রাঙামাটি শহরের লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন পশ্চিম মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা হামিদা বেগম বলেছেন, অতি বৃষ্টির ফলে সোমবার ভোর ৫টার দিকে আমার ঘরটি ধসে পড়েছে। ঘর থেকে কিছু বের করেতে পারিনি। আমরা ছিলাম আশ্রয়কেন্দ্রে। আমার স্বামী ফজরের নামাজ পড়তে আসছিল, তখনই বিকট শব্দে ঘরটি ভেঙে পড়ে যায়।
শহরের শিমুলতলী এলাকার মো. ইমন বলেন, আমি এতক্ষণ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। ভারী বৃষ্টি হচ্ছে দেখে এখন পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছি।
রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী-রাঙাপানি সড়কে পথচারী সুমন চাকমা বলেন, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের পর এই সড়কটি মেরামত করছিল। এখন কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় আবারও সড়কটির এক পাশ ধসে গেছে। সড়কটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেছেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাঙামাটির অনেক জায়গায় পাহাড় ধস হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অতি দ্রুত রাস্তা চলচলের উপযোগী করেছে। সোমবার সকালেও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় তা আবার সচল হয়েছে। জেলার ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা জুড়ে বেশকিছু ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে।
এদিকে, কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত ও ফেরির পন্টুনের লোহার দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বন্ধ আছে। পন্টুনের ছিঁড়ে যাওয়া দড়ি মেরামত ও নদীর তীব্র স্রোত না কমা পর্যন্ত ফেরি পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
সড়ক ও জনপথ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, তীব্র স্রোত আর পন্টুনের সমস্যার কারণে ফেরি পারাপার আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ ফেরি চালু করা যেতে পারে, সেটি আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে, কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়েই যানবাহন চলাচল করছে। কেবল ফেরি বন্ধ থাকায় এক পাড়ের যানবাহন অন্য পাড়ে যেতে পারছে না।
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয় রাঙামাটি শহর:
এদিকে, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে জেলা শহরের মানিকছড়ি এলাকায় জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কেভি ভোল্টের লাইনের ওপর গাছ পড়ায় রাঙামাটি শহর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ৫ ঘণ্টা পর রাত ১০টায় শহরে বিদুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, মানিকছড়ি এলাকায় জাতীয় গ্রিডের সোর্স লাইনে একটি বড় গাছ পড়েছে। এতে পুরো শহর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিজয়/রফিক