ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

রামপালে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ৩০ আগস্ট ২০২৩  
রামপালে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

বাগেরহাটের রামপালে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একটি ক্রয় প্রস্তাবসহ ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

বুধবার (৩০ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।

তিনি বলেন, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয়কমিটির অনুমোদনের জন্য ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৫টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৯টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি-১৯৯৬ এর আওতায় বিল্ড ওন অপারেট (বিওও)  ভিত্তিতে হিসেবে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানি  এসিডব্লিউএ পাওয়ার কোম্পানি, সৌদি আরব; কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড,বাংলাদেশ; ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেড, বাংলাদেশ এবং মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বিউবো এবং পিইসি কর্তৃক প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতার সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদে ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে উক্ত কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা ১১.০৬৭ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড এই মসুর ডাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ৯৫.০৯ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪০ লাখ (+৫%) লিটার রাইস ব্রাণ তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে এই তেল বিক্রি করা হবে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মজুমদার ব্রাণ অয়েল মিলস লিমিটেড ২লিটার পেটজাত বোতলে এই তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৬১.৫০ টাকা হিসেবে ৪০ লাখ লিটার ব্রাণ অয়েল কয়ে মোট ব্যয় ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল) এর জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট (৭২% বিপিএল মিনিমাম) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী: মেসার্স উইলসন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, মালয়েশিয়া) এই রক ফসফেট সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফেট এর দাম ৩৫৯ মার্কিন ডলার।

সভায় চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল. এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন একটি প্রস্তাবেন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।

তিনি বলেন, ডিএপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র ২টি দরপত্র জমা পড়ে। ২টি দরপত্রই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব  প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেস্ট ইস্টার্ন, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী: গুয়াংজি পেনগাউই ইকো-টেকনোলজি কো.লি. চায়না) এই ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড এর দাম ৫৪০ মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৭.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে এক কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩০ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার ৫০ টাকা।

সভায়, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৯.১৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে এক কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩১ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর নিকট থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৩.২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৯ কোটি ১৮ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকা।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের লক্ষ্যে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় কমানো সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব  নীতগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

/হাসনাত/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়