ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী

করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ পরিচালনা করেছি, যা বিশ্বে নজিরবিহীন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:৪৩, ২ নভেম্বর ২০২৩
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ পরিচালনা করেছি, যা বিশ্বে নজিরবিহীন

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সুষ্ঠুভাবে এই সংসদ পরিচালনা করতে পেরেছি। আজ সাতটি আইন ধরে মোট ১৬৫টি আইন পাস করেছি। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ পরিচলনা করেছি, যা বিশ্বে নজিরবিহীন।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপ্তি দিনের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। 

দেশবাসীকে আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আপনার গাড়ি পোড়ায় তাদের ধরে আগুনে ফেলেন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দেন। তাহলে তারা থামবে, এ ছাড়া থামবে না।

সংসদে গাড়ি পোড়ানোর ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি আমাকে পদত্যাগ করাবে, নির্বাচন হতে দেবে না, এই বলে তারা তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা কোন বাংলাদেশ চায়? এই সন্ত্রাসী, জঙ্গি, অমানুষগুলোর সঙ্গে কারা থাকে? এ জানোয়ারদের সঙ্গে আমি বসব (সংলাপে)? তাদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে? জানোয়ারেরও ধর্ম থাকে। কিন্তু তাদের কোনও ধর্ম নেই।

তিনি আরও বলেন, এসব দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। সাংবাদিকরা কী দোষ করেছিল? তারা তো বিএনপির সংবাদ কাভার করতেই গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে বিএনপি। আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, এসব আগুন সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিন। প্রত্যেকে এক হয়ে এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, হামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে থাকব। যাদের বাস পুড়িয়েছে, যাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের আগেও আমি সহযোগিতা দিয়েছি। এবারও আমরা সহযোগিতা করব।

বিএনপি-জামায়াত দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গঠনমূলক কাজ করে আর বিএনপি দেশকে ধ্বংস করে। বাংলাদেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি ঠিক। কিন্তু সেসময় বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ করেছে। জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে চলেছে। গত ২৮ অক্টোবরও বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস করেছে।

প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেন, দেশে আমাকে হত্যার বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি বিদেশেও আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমি মৃত্যু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করি না। জন্মেছি যখন একদিন মরতে তো হবেই। 

রিজার্ভ নিয়েও আশার বাণী শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, খুব সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।  

শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমি বিদেশে যাই সেখানেও কিলার হায়ার (ভাড়া) করে আমাকে মারার প্রচেষ্টা। সেই চেষ্টা করেছে ওই খালেদা জিয়ার ছেলে, যে লন্ডনে বসে আছে, সে-সহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই। তবে আমি কখনো এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই।

জনগণই তার শক্তির উৎস মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ হলো শক্তির উৎস। আমার দেশে ফেরা, কাজ করা, আমার একটাই শক্তি ছিল, সেটা হলো এদেশের জনগণ। এই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলছি।  

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার পরিবার বলতে আমি বুঝি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ। সেই মানসিকতা নিয়ে সেই আন্তরিকতা নিয়েই আমি দেশের জন্য কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, কে কোন দল করে, সেটা তিনি দেখেননি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দর জীবন, উন্নত জীবন পাক, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ, সেই উন্নত বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে

দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম, জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি। তাহলে এগুলো গেল কোথায়? 

তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্যগুণ বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা।  

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এটা করতে পারব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, অধিকার সুরক্ষিত থাকুক, সেটা আমরা চাই।

শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র এক হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি।

নৌকা মার্কাই উন্নত জীবন দিতে পারে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ছিল বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আর সেটাকেই ধ্বংস করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। তারা কোন বাংলাদেশ চায়? এই ধ্বংসস্তূপ, নাকি উন্নত বাংলাদেশ? 

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন মান যে উন্নতি হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চান? একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারবে। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।

তিনি বলেন, কোন বাংলাদেশ আমরা চাই? দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি। বলেছিলাম দিন বদলের সনদ। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ! আমার আজ বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতা নেই।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষ হত্যা, মামলা নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নতি করি, অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র।  

তিনি বলেন, ২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, কোন মানুষ এরকম করতে পারে? ২০১৩, ১৪ ও ২০১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল। তারপর আবার ভয়ঙ্কর রূপ জাতি দেখছে।

আসাদ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়