ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

সরকা‌রের পদত্যাগ দা‌বি আদা‌য়ের অধিকার জ্বালাও-পোড়াও নয়: তথ্যমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ১২ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:১৩, ১২ নভেম্বর ২০২৩
সরকা‌রের পদত্যাগ দা‌বি আদা‌য়ের অধিকার জ্বালাও-পোড়াও নয়: তথ্যমন্ত্রী

সরকারের পদত‌্যাগ চাওয়ার অধিকার সবার আছে, তার মা‌নে অধিকার আদায়ের কথা ব‌লে অব‌রো‌ধের না‌মে গা‌ড়ি পোড়া‌নো, বোমা মারা নয় ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রোববার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি নি‌য়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

‌তথ‌্যমন্ত্রী ব‌লেন, অবরোধ কর্মসূ‌চির নামে বিএনপি-জামায়াত দেশে জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছে। আজ অবরোধ ডাকলে, গতকালই শুরু হয় গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো। মানুষ ভেবেছিল, যেহেতু আগামীকাল অবরোধ, সেহেতু আজ গাড়ি-ঘোড়ার ওপর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাবে না। কিন্তু গতকাল থেকেই তা শুরু হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি এটি হতে পারে না। এগুলোকে শুধু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বললে কম হবে।

‘মানুষের সহায়-সম্পত্তিতে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে। একটি গাড়ি পোড়ানো মানে একটি পরিবারকে পুড়িয়ে দেয়। একটি পরিবারের স্বপ্ন পুড়িয়ে দিয়ে তাদের স্বপ্নকে পথে বসানো। যারা রাজনীতি করেন, তারা এ কাজ করতে পারেন না। হ্যাঁ, তারা রাস্তায় নেমে এসে ব্যারিকেড দিক, মানুষকে বলুক—আমরা অবরোধ ডেকেছি, আপনারা পালন করুন। সেটি তো তারা করে না’- যোগ ক‌রেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বিরোধী দলের কর্মসূ‌চি নি‌য়ে জাতিসংঘের বিবৃতি প্রস‌ঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রথমত, জ্বালাও-পোড়াওয়ের অধিকার আছে বলে জাতিসংঘ বলেছে, এটা আমি মনে করি না। জাতিসংঘ এটা বলেনি। আন্দোলন করার অধিকার আছে। সরকারের পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার আছে। আমার পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার আছে। সেই অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেটা মানে এই নয় যে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো। এটিকে কেউ সমর্থন করেনি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনেক সদস্য তাদের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। আরও অনেকে বিদেশ থেকে নিন্দা জানিয়েছে। বিএনপি নানাভাবে অনেককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ড কেউ সমর্থন করেনি, করতে পারে না।

মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের কারণে সামুদ্রিক বাণিজ্যের দুয়ার ও সম্ভাবনা খুলেছে জা‌নি‌য়ে মন্ত্রী বলেন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। এটি ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, হয়নি। এবার সত্যিকার অর্থে গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীতে হয়েছে। এটি আমাদের সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিশাল দুয়ার খুলে দিয়েছে। সেখানকার পুরো এলাকা বদলে গেছে। কক্সবাজার শহর বদলে গেছে। এভাবে দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রাম বদলে গেছে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেরই একটি অংশ। গতকালের অনুষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের আয়োজনেই হয়েছে।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এই উন্নয়ন করে যাচ্ছেন, তখন দেশ ধ্বংসের জন্য পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে জনগণের ওপর। তারা কোনও উন্নয়ন দেখতে পান না। এই ধ্বংস ও পেট্রোল বোমার বিরুদ্ধে সবাই মিলে সোচ্চার হলে আমি মনে করি, এগুলো বন্ধ হবে’- বলেন হাছান মাহমুদ।

বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাদের এত জনপ্রিয়তা তারা বলেন, সেটি যাচাই করুক। তাদের এত উদ্যোগী কর্মী যারা ২০ মিনিটে ময়দান ছেড়ে চলে গেছেন, তারা কতটুকু নামে আমরা একটু দেখি। তাদের এত জাঁদরেল নেতা, পুলিশের আওয়াজে- কোনও গুলি হয়নি, কোনও টিয়ারগ্যাসও (নিক্ষেপ) হয়নি; ছোটবেলায় যে বড় বাজি ফোটাতাম সেই বাজির আওয়াজ হয়েছে, সেই আওয়াজে মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন। তারা নির্বাচনে আসুক, এসে দেখুক তাদের কতটুকু জনপ্রিয়তা। কর্মীরা কতটুকু নামে, এই নেতাদের ওপর কতটুকু আস্থা রাখে। আমরা চাই তাদের সঙ্গে নির্বাচন করতে। নির্বাচনের শিডিউলের মধ্যে তারা এলে তাদের নিয়েই নির্বাচন হবে।

যদি তারা না আসে? এমন প্রশ্নের জবা‌বে তি‌নি বলেন, আমি মনে করি দেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য নির্বাচন হতে হবে। কোনও একটি দল না এলেও আরও অনেক দল তো অংশগ্রহণ করবে। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।

বিএনপি নির্বাচন করতে দেবে না বলে যে ঘোষণা দিয়েছে সে বিষয়ে আওয়ামী লী‌গের যুগ্ম সম্পাদক ব‌লেন, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সেটি যে কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার এখতিয়ার কারও নেই। নির্বাচন প্রতিহতের কথা বলা মানেই দেশবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী কথাবার্তা। সুতরাং দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য যারা রাখবে কিংবা অপচেষ্টা চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। সরকার, জনগণ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যাহত রাখা। সেজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বৈঠক প্রস‌ঙ্গে তথ‌্যমন্ত্রী ব‌লেন, ভারতে যে বৈঠকটি হয়েছে সেটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। সেই বৈঠকের বিষয় একান্তই তাদের। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে সেটি পত্রপত্রিকায় এসেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন, উন্নয়ন- এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অবশ্যই ভারত যেটি বলেছে, যথার্থ বলেছে। বাংলাদেশের জনগণের ঠিক করবে নির্বাচনের মাধ্যমে কারা ক্ষমতায় আসবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছে- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের হাতে নেই। তার মুক্তি আইনের হাতে, আদালতের হাতে। সরকার চাইলেই তো মুক্তি দিতে পারবে না। সরকারের কাছে যেটুকু ক্ষমতা ছিল সেটা দিয়ে তার সাজা স্থগিত রেখে তাকে ঘরে থাকার ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে, বাকিটা আদালতের বিষয়।

নঈমুদ্দীন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়