নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের আহ্বান
![নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের আহ্বান নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের আহ্বান](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023November/fm-2311271412.jpg)
নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি আরোপ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বেশি কিছু চায় না, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বাংলাদেশও তা-ই চায়। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের সাহায্য করছে। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাই। আমরা যদি এটা করি, আমেরিকা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু দেশ। শুধু নির্বাচন নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আছে। আমেরিকা সব সময় বাস্তববাদী।
ড. মোমেন বলেন, আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলব, যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে, তাদের তারা ভিসা পলিসির মধ্যে ঢুকাক। তারা তাদের যা করার করুক, নির্বাচনে যারা বাধা দেবে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চাই না। আমেরিকা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা তাদের সঙ্গে আছি, তারা আমাদের সঙ্গে আছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একাত্তরে সমর্থন দেয়নি। তারা পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছে। কিন্তু, আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমেরিকা প্রতিনিয়ত আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। কোনোদিন আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এটা কী মিন করে? তারা আমাদের সঙ্গে আছে।
মন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের অবদান যুক্তরাষ্ট্রও জানে। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টা চলছে। তবে, এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে বারবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় টেনে এনে তাদের বিরক্ত করে ফেলা হচ্ছে। তাদের অযথা প্রশ্ন করে বিরক্ত করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সব দলকে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, কোনো দল না এলেও বিশ্বে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সরকার চায়, সবাই আসুক।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা এটার জন্য দায়ী। কিছু হলেই মিশনে গিয়ে ধর্না দেয়। সম্প্রতিকালে আমাদের মিডিয়াও এটার জন্য দায়ী। কিছু বাঙালি প্রবাসী আছে, তারাও এটার জন্য দায়ী। কয়েকটি গোষ্ঠীর কারণে বিদেশিরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। প্রত্যেক দিন মার্কিন মুখপাত্রকে ত্যক্ত করে ফেলে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা, বাংলাদেশি লোকেরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার। আমরা তাদের অগ্রাহ্য করতে পারি না। আমরা করিও না। আমাদের কোনো উদ্দেশ্যও নেই। আমরা তো এজন্য তাদের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরত্বসহকারে গ্রহণ করি। তবে, আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা আছে। বাস্তবতার নিরিখে তারা যদি কোনো প্রস্তাব দেয়… আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি।
নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের তৎপরতা কম দেখা যাচ্ছে, সরকার কি বিদেশিদের চুপ থাকতে বাধ্য করল কি না? এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমাদের বন্ধু দেশ যারা, তারা অনেক সময় আমাদের উপদেশ দেয়। যেটা ভালো, সেটা গ্রহণ করি। অন্যের যদি ভালো উপদেশ থাকে সহায়ক নির্বাচনের জন্য, আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। সম্প্রতি তারা বলছে, সংঘাতমুক্ত। আমরাও চাই। কিন্তু সেটা আমরা একা পারব না।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, জনগণের যদি সম্পৃক্ততা থাকে, জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে সেটা অংশগ্রহমূলক। আমাদের প্রায় নির্বাচনে ৫০ ভাগ লোক ভোট দেয়। আমেরিকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব সময় নির্বাচন হয়। সিনেটর কেনেডি, সিনেটর জন কেরি তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। সম্মানিত লোকের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তারানকো সাহেব কিছু করতে পেরেছে? আমরা চাইব না, বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। তবে, সহায়কের ভূমিকা পালন করলে এটাতে স্বাগত জানাব। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। এখানে যদি কেউ সহায়তা করতে চায়, স্বাগত জানাব। কিন্তু, আমরা মাতব্বরি করতে দেবো না। যারা মাতব্বরি করবে, তাদের আমরা সহ্য বা গ্রহণ করতে পারি না।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরও যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, বিদেশিরা গ্রহণ করবে কি না? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই গ্রহণ করবে, যদি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়। একটি বড় দল যদি না আসে…। মিশরে বড় দল ছিল ব্রাদারহুড, তারা নির্বাচনে আসেনি; আফগানিস্তানে তালেবান আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র ওটাকে গ্রহণ করেছে। কোনো একটি বিশেষ দল যদি না আসে, এটা খুব গুরত্বপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, সরকার হিসেবে চাই, সব দল নির্বাচনে আসুক। আমরাও নিজেদের যাচাই করতে চাই। তাদের যদি কোনো জনসমর্থন থাকে, তারা নির্বাচনে আসবে এবং প্রমাণ করবে তাদের অবস্থান।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের লোকরা আগেভাগে দুশ্চিন্তা করে। আমরা বিদেশে যে জিনিসপত্র বিক্রি করি, কেউ আমাদের দয়া-দাক্ষিণ্য দেখায় না। সস্তায় ভালো জিনিস বিক্রি করি এবং যথাসময়ে পায় বলে তারা কেনে। সুতরাং আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা পরিণত সরকার। তারা জানে, র্যাব অত খারাপ কাজ করে না। আমেরিকা র্যাবকে সমর্থন করবে। হয়ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসান/রফিক
আরো পড়ুন