ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

শ্রমনীতি নিয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের সভা আজ

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩  
শ্রমনীতি নিয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের সভা আজ

ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠি নিয়ে আজ (সোমবার) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক নীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সভায় পররাষ্ট্র সচিব, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

সূত্র জানায়, শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বিধিনিষেধসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার অন্যতম সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এই উদ্বেগ জানিয়ে ২০ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বার্তা পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার অনুরোধ করে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠিতে উল্লেখ করেছে।

এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শ্রম অধিকার স্মারকের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তার জন্যই এই সভায় আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কাজ করতে ‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান এগিয়ে নিতে স্মারক’ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেন। মার্কিন মেমোরেন্ডামটি এমন এক সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, যখন ন্যূনতম মজুরিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিটি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, যদিও স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি, যা সব দেশের ওপর আরোপিত হতে পারে; তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। 

চিঠিতে বলা হয়, স্মারক অনুসারে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শ্রম-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে। তাই এই নীতি আগ্রহী মার্কিন দূত বা মিশনগুলোকে দেশি বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে। এটা মনে হচ্ছে, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমনটি তারা মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে, স্মারকটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রম-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। মেমোরেন্ডাম সই করার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন কিংবা ভয় দেখাবেন, তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তিনি বাংলাদেশের শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করে আরও বলেন, তিনি এখনো (কল্পনা আক্তার) জীবিত আছেন। কারণ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি নিয়ে কোনো ভয় কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কিছুই দেখি না। বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ বিশেষ কোনো সুবিধা পায় না। যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। পনেরো শতাংশের বেশি শুল্ক দিয়ে আমেরিকাতে আমাদের পণ্য রফতানি করতে হয়। কাজেই বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, মার্কিন এ শ্রমনীতি সব দেশের জন্যই। এটা নতুন কিছু না। আমি মনে করি, তারা সব দেশকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা অনেক উন্মুক্ত, এখানে গণতন্ত্রের চর্চা আছে। এখানে স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায় সবকিছু হয়।

বাণিজ্য সচিব বলেন, এমন অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য করে, যেখানে গণতন্ত্র নেই। যেখানে একদলীয় শাসন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নেই। সুতরাং রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে বলে মনে করি না।

/হাসনাত/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়