মুক্তিযোদ্ধাদের কবর আজীবন বিনামূল্যে সংরক্ষণ করা হবে: মেয়র আতিক
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থান ১০ বছর সংরক্ষণের পরিবর্তে আজীবন বিনামূল্যে সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ডিএনসিসি আয়োজিত ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মেয়র বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধারা কোনোকিছুর জন্য যুদ্ধ করেননি। যুদ্ধ করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। কোনো সরকার আপনাদের সেভাবে সন্মান দেয়নি। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার আপনাদের উপযুক্ত সম্মান দিয়েছেন। তিনি আপনাদের যা দিয়েছেন এবং যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা কেউ দিতে পারবে না।
আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি দুই মাসে একদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে। মাসের শেষ সোমবার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বসব। তাদের কথা শুনব, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। তাছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা হলে আমার দুয়ার সব সময় তাদের জন্য খোলা থাকবে।
মেয়র বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কোনো সেবার জন্য উত্তর সিটিতে আসলে তাদের হ্যারেজমেন্ট করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কথা শুনতে হবে, কাজ করে দিতে হবে। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে গিয়ে সেবা দিয়ে আসতে হবে। তাদের কোনো কাজে সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।
ঢাকায় প্রবেশ স্থানে একটি ‘মুক্তিযোদ্ধা গেট’ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মেয়র আতিক। তিনি বলেন, দেশের প্রখ্যাত ডিজাইনারদের দিয়ে সেই গেটের ডিজাইন করা হবে। প্রখ্যাত প্রকৌশলীদের দিয়ে সেই গেট নির্মাণ করা হবে। ডিএনসিসি এলাকার সব সড়ককে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের ঘোষণা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, মিরপুরে যে জল্লাদখানা আছে, সেখানে যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অত্যাচার করা হতো। আমি আজ ঘোষণা দিচ্ছি, সেই জল্লাদখানার পাশে একটা লাইব্রেরি করা হবে। সেই লাইব্রেরির নাম হবে মুজিব কর্নার। সেখানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সব বই থাকবে। আপনারা গিয়ে বই পড়বেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, এই দেশ আমাদের। এই দেশের মাটি আমাদের। এই মাটিতে আমরা জামায়াত-শিবিরকে চাই না। জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে এই দেশকে বাঁচাতে হবে।
তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। তবে তার দেওয়া আমাদের সবথেকে বড় উপহার জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি। মেট্রোরেলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাতে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারেন, মেয়রের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।
মেয়র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মুক্তিযোদ্ধাদের এই দাবি পাস করার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও ডিএনসিসির পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এর পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মো. রফিকুল আলম ও লীনু বিল্লাহ যুদ্ধকালীন গান পরিবেশন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডিএনসিসির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবারের সদস্য, সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের ১ হাজার ৩০০ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মো. রফিকুল আলম ও লীনু বিল্লাহসহ ডিএনসিসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
মেয়া/রফিক