ইশতেহার নিয়ে জনগণের কাছে যান: নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়ে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে, তা নিয়ে জনগণের কাছে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ছয় জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন প্রান্ত থেকে শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, নরসিংদী, বান্দরবান জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমরা গতকাল (বুধবার) আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছি। ইশতেহারটি পড়ুন। ইশতেহার নিয়ে জনগণের কাছে যান এবং নৌকায় ভোট চান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি, সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে এবং একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে ক্ষমতায় আসলে সেই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখতে। সে কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাবেন। আপনারা ভোট চাইবেন। জনগণ ভোট দিয়ে যেন আমাদের সেবা করার সুযোগ দেন। আর একটি কথা— এবার যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানারকম চক্রান্ত হচ্ছে, তাই নির্বাচনের পরিবেশটা যাতে সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসি দল, আরেকটি দল (জামায়াত) হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। এরা না আসলে নির্বাচন অংগ্রহণমূলক হবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে জনগণের সমাবেশ হলে। ভোটারদের অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। আমরা সেটাই চাই। সন্ত্রাসী দল তারা নির্বাচনে বিশ্বাসও করে না। মানুষ খুন ছাড়া আর দুনীতি করা ছাড়া ওদের দিয়ে দেশের কোন কল্যাণও আসবে না। ওরা মানুষকে কিছুই দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, সে করণেই আমরা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হ্যাঁ, নৌকা মার্কা দিয়েছি, পাশাপাশি আরও যারা দাঁড়াতে চায়, তারাও দাঁড়াবে। এখানে একটি অনুরোধ থাকবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন। যার যার ভোট, সে সে চাইবেন। জনগণ যাকে খুশি, তাকে ভোট দেবে। এটা তো আমাদেরই স্লোগান। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’-এই স্লোগান দিয়েই তো আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। এই স্লোগান দিয়েই তো আমরা সংগ্রাম করেছি। সে কথাটা মনে রেখে যার যার ভোট সে সে চাইবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেটাই মেনে নেবেন। সেভাবেই এ নির্বাচন পরিচালিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চাওয়ার অধিকার যেমন প্রার্থীর আছে, তেমনই ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের। এখানে কেউ কারো ওপর কোনো বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো সংঘাত সৃষ্টি করবেন না।
তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। সকলের হাতেই মোবাইল ফোন আছে, সিসি ক্যামেরা আছে। কাজেই যারাই গোলমাল করবেন, ছবি কিন্তু উঠে আসবে। আর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে কেউ কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। জনগণ ভোট দেবে। তাদের সেই ভোট দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে দিতে হবে এবং যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। জনগণের কাছে সেটাই আমাদের দাবি। সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এ দেশের ইতিহাস বলে, আওয়ামী লীগের হাতে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, এছাড়া অন্য কোনো দলের হাতে হয় না। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিলাম। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার কাজ করেছে। আজ বাংলাদেশের দৃশ্যপট উন্নয়ন অগ্রগতিতে পরিবর্তন হয়েছে। ২০২১ সালেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি। সেটাকে ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটা মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরানের (রহ.) মাজার জিয়ারত এবং সমাবেশের মাধ্যমে দলের নির্বাচনি প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আগামীকাল তিনি বরিশালে যাবেন। এদিন বিকেল ৩টায় তিনি জেলা শহরে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর পর ৩০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সফর এবং গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসনের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া তেজগাঁও দলীয় কার্যালয় প্রান্তে এবং শেরপুর প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পারভেজ/রফিক