ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

শ্রমিকের পাওনা দেননি ইউনূস, ঘুষেও রফা হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ১ জানুয়ারি ২০২৪  
শ্রমিকের পাওনা দেননি ইউনূস, ঘুষেও রফা হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ায় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠান ঘুষ দিয়ে সেটি ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করেছে বলে মন্তব‌্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশর (পিআইবি) গবেষক পপি দেবী থাপা গ্রন্থিত ‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব‌্য করেন। পিআইবির মহাপরিচালক ও গবেষণা গ্রন্থটির মুখবন্ধকার একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বহু নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফৌজদারি ও দেওয়ানি অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন। অনেকে অনেক দিন জেলও খেটেছেন। যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, এমন ঘটনাও আছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই যে, ইউনূস সাহেব বহু বছর ধরে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেননি। এর পর যখন শ্রমিকরা আদালতে গেছে, তখন আদালতের বাইরে দুজন শ্রমিক নেতাকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি করে ৬ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, সাধারণ শ্রমিকরা তো আর টাকা পায়নি। দুজন নেতা টাকা পেলে তো আর হবে না। সে কারণে সাধারণ শ্রমিকরা মামলায় গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্ধুরাষ্ট্ররা গার্মেন্টস শ্রমিকের পাওনা আদায়ের কথা বলে। আশা করব, তারা এ ব্যাপারেও কথা বলবে। শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণেই  অর্থাৎ একটি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বিধায় মামলা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার আদালত। তবে, রায় ঘোষণার পর আদালত আপিলের শর্তে ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেন।

‘বিএনপি যাদেরকে চিঠি দিয়েছে, তারাও এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে’
 
বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো এখন দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভেবেছিল, দেশে নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হলেও জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে বিএনপির সমর্থকরাও যোগ দিয়েছে।

তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই পেট্রোল বোমা, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করে, মা ও শিশুকে একসাথে হত্যা করে, ট্রেন লাইন কেটে, ট্রেনের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, গাড়িতে মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চেয়েছে, পারেনি। তারা এখন তাদের সেই পুরনো কায়দা—বিদেশিদের কাছে চিঠি লেখা শুরু করেছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। ট্রেন লাইন যারা কেটে ফেলেছিল, তারা ধরা পড়েছে। তারা স্বীকার করেছে, কে টাকা দিয়েছে, কার নির্দেশে এগুলো করেছে।  এগুলো দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি এই কাজগুলো ২০১৩-২০১৪-২০১৫ সালে করেছে, এখন আবার করছে। এখন আত্মরক্ষার্থে চিঠিপত্র লিখছে। যাদের কাছে চিঠি লিখছে, তারাও এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে, পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে এবং তারা বলছে যে, নির্বাচন যেন সহিংসতামুক্ত হয়। দেশের বিরুদ্ধে বহু চিঠি বিএনপি লিখেছে, এই চিঠিতে কোনো লাভ হবে না।’

ভোট বন্ধ করার জন্য বিএনপি এখন প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো নির্বাচনি এলাকায় কোনো প্রার্থী মারা গেলে, সেই আসনে নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে তারা এই পরিকল্পনা করেছে। তবে, সন্ত্রাসী দলের মতো এসব ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।’

‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ বই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে কত বেদনার, কত সংগ্রামের; সেটি যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তাদের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন। আমরা ১ কোটি শরণার্থীর কথা বলি, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরেও ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়েছিল, যাদের ঘরবাড়ি হানাদারেরা জ্বালিয়ে দিয়েছিল, অপরের বাড়িতে থাকতে হতো।

স্মৃতিচারণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রান্তে রাঙ্গুনিয়ায় আমাদের গ্রামটা ছিল শরণার্থী যাওয়া-আসার রোড। সেই পথ ধরে মিজোরাম যেতে হলে উঁচু পাহাড় পাড়ি দিতে হতো। অনেক বাচ্চা ও বয়স্ক যারা পাহাড়ে উঠতে পারত না, তাদের ফেলে অন্যরা চলে যেতো। এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে।’

পপি দেবী থাপা, পিআইবির সহ-সম্পাদক আকিল উজ-জামান, গবেষক মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়