ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ফুল সার্ভিস জলমহাল সিস্টেম স্থাপনে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৪  
ফুল সার্ভিস জলমহাল সিস্টেম স্থাপনে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ

জলমহালের ইজারা মূল্য পরিশোধ, অনলাইনে ইজারা প্রতিবেদন, ইজারা আদেশসহ জলমহালের ইজারা ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অনলাইনেই সম্পন্ন করার সুবিধাসহ ফুল সার্ভিস ডিজিটাল জলমহাল সিস্টেম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

সম্প্রতি সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারি জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমটির ৭৫তম সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন—ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত মহাল শাখা এবং মৎস্য অধিদপ্তর ও সমবায় অধিদপ্তর কর্মকর্তারা। ইজারার জন্য প্রস্তাবকৃত জলমহাল সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকবৃন্দ এবং তাদের প্রতিনিধিরা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক এবং ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল এবারের জলমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা জলমহাল ইজারা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অনলাইনে জলমহালের ইজারা আবেদন প্রক্রিয়া উদ্বোধন করেন। এর আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে জলমহাল ইজারার আবেদনে অনেক সময় জলমহাল ইজারা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের নানা অপকৌশলের কারণে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। অনলাইনে জলমহালের আবেদন প্রক্রিয়া চালুর ফলে এখন আর সেই সুযোগ নেই। অনলাইনে জলমহাল আবেদন শুরুর পর জলমহাল সংশ্লিষ্ট অংশীজন থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনি। বর্তমানে চালু অনলাইনে জলমহাল আবেদন সিস্টেমের উন্নয়ন করে ফুল সার্ভিস সিস্টেমে রূপান্তর করা হলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা আরও সুবিধাজনকভাবে দক্ষ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

এবার ১৪৩১-১৪৩৬ বঙ্গাব্দ মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল ইজারার জন্য বিভিন্ন জেলার ৫৭১টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড অনলাইনে আবেদন দাখিল করে। এর মধ্যে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জলমহাল কমিটির সভায় বাগেরহাট, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, জামালপুর ও হবিগঞ্জ জেলার ১৫০টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। যাচাই-বাছাই, জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারি জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটি ১২৪টি জলমহাল ইজারার অনুমোদন দেয়।

বর্তমানে স্মার্ট ভূমি-সেবা পোর্টাল (land.gov.bd) থেকে অথবা সরাসরি জলমহাল আবেদন সিস্টেমে (jm.lams.gov.bd) গিয়ে জলমহাল ইজারার জন্য আবেদন দাখিল করা যাচ্ছে। এছাড়া, জলমহাল ইজারার আবেদন অনলাইনে দাখিল এবং ইজারা প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উপর্যুক্ত ওয়েবপোর্টাল থেকেই জানা যাচ্ছে।

বিল, হাওর, বাওর, নিম্ন জলাভূমি ও নদ-নদীতে মৎস্য আহরণের এলাকাকে জলমহাল বলা হয়। ২০২৩ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে জলমহাল ৩৯ হাজারের বেশি। জলমহাল ইজারা দিয়ে বছরে শত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়। জলমহাল থেকে থেকে আহরিত মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে। দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে জলমহালের উপর নির্ভরশীল।

বেশ কয়েকটি জলমহাল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইজারাবিহীন রাখা হয়েছে, যেমন: দিনাজপুরের রামসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর। মাছ সংগ্রহের অভয়াশ্রম ঘোষিত জলমহালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওর, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর ইত্যাদি।

উন্নয়ন প্রকল্পে ৬ বছরের জন্য ২০ একরের ঊর্ধ্বে সরকারি জলমহাল এবং বিশেষ ধরনের বিবিধ জলমহাল ইজারা আবেদন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘সরকারি জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটি’র সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন হয়। ‘সাধারণ আবেদনে’ ৩ বছরের জন্য ২০ একরের ঊর্ধ্বে বদ্ধ সরকারি জলমহালের ইজারা আবেদন ‘জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন হয়। ‘সাধারণ আবেদনে’ ৩ বছরের জন্য ২০ একর পর্যন্ত বদ্ধ জলমহালের ইজারা আবেদন ‘উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন হয়।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়