ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

‘একতরফা নির্বাচন’ দেশে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে: ইউট্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৪  
‘একতরফা নির্বাচন’ দেশে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে: ইউট্যাব

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, আগামীকাল ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশন একতরফা ও ডামি নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী এবং সমর্থকেরা নিজেরাই সংঘর্ষ, হানাহানি ও সহিসংতায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, একতরফা ও ডামি নির্বাচন ও সরকারের একগুঁয়েমি আচরণ সারা দেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীতে চলন্ত ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

তারা বলেন, ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই বিরোধী দল তথা বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

ইউট্যাব নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখলের পর প্রত্যেকটি খাতে দলীয়করণ করেছে। এ কারণে দেশে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র নেই। দেশে চলছে একদলীয় শাসন ও এক ব্যক্তির শাসন। দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। অথচ, সরকার বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও হামলা এবং বাধা দিয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য অতি উৎসাহী হয়ে অপেশাদার আচরণ করছেন। দেশের জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা বিএনপি ও বিরোধী দল দমনেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো জঘন্য কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এরা দেশ ও জনগণের শত্রু।

ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। ক্রসফায়ার ও জোরপূর্বক গুমের সংস্কৃতি চালুর মাধ্যমে অহরহ মানবাবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে অদ্যাবধি প্রায় ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বিনা কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতা আছেন। শুধু তাই নয়, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত এবং কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যা খুবই দুঃখজনক। এরপরও দেশে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা ঘটাচ্ছে সরকারি দলের লোকজন ও বিভিন্ন সংস্থার লোকরা। তা না হলে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না কেন? এর আগে ভোরে তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে চার ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করতে পারছে না। অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। তারপরও এসব জ্বালাও-পোড়াও এবং অন্যায়-অপকর্মের দোষ চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর।

তারা বলেন, আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মানিত ভোটার ও সচেতন বিবেকবান নাগরকিদের কাছে আহ্বান— আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রহসনের নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকি। একইসঙ্গে ঢাকায় ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় নিন্দা, শোক এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

মেয়া/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়