ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১০ জানুয়ারি ২০২৪  
৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করার জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে সব রিটার্নিং অফিসারকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, ভোটে অংশগ্রহণকারী ২৮টি দলকেও হিসাব দিতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে প্রার্থী বা দল ব্যয়ের হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে ইসি প্রার্থীদের জেল-জরিমানা ও দলের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সম্প্রতি ইসি’র উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এমন বিধান রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীকে ও ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোকে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৯৫৯ জন প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ হয়েছে। তাদের আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। যে আসনগুলোর নির্বাচন এখনো হয়নি কিংবা কোনো কারণে স্থগিত রয়ে গেছে, সেগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ হলে, সে সময় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এসব প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব কমিশনে দাখিল করতে হবে। ভোটে যে দলগুলো প্রার্থী দিয়েছে, সেসব দলকে ৯০ দিনের মধ্যে দলের ব্যয়ের হিসাব দাখিল করার বিধান আছে। যদি কোনো প্রার্থী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের জেল-জরিমানা হতে পারে। দলগুলো হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করেছে ইসি। বাকি ২৯৮টি আসনে বিজয়ীদের গেজেট ৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তাই, আইন অনুযায়ী, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২৯৮ আসনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে এবং ৭ এপ্রিলের মধ্যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নির্বাচনি ব্যয়ের বিবরণী জমা দিতে হবে।

এবারের নির্বাচনে ভোটার প্রতি প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। তবে, ভোটার সংখ্যা যাই হোক না কেন, মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পাবে।

৫১ থেকে ১০০ জন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা, ১০১ থেকে ২০০ প্রার্থীর জন্য ৩ কোটি টাকা এবং ২ শতাধিক প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দলের সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ ছিল। সে হিসেবে এবার সর্বোচ্চ ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, এবার ২৮টি দল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া, স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৩৭ জন। সব মিলিয়ে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১ হাজার ৯৬৯ জন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৫ জন এবং জাতীয় পার্টি ২৬৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। দল দুটি সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে। তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন করে প্রার্থী দিয়েছে। এই দল দুটি সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা করে ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

অন্যদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ৬৩ জন প্রার্থী দিয়েছে। এই পাঁচটি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

অন্যান্য দলের মধ্যে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ৪ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০ জন, গণফোরাম ৯ জন, গণফ্রন্ট ২১ জন, জাকের পার্টি ২১ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১৩ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৪ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এই ১৮টি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

আরপিও অনুযায়ী, প্রার্থী প্রতি দল সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনি প্রচারে দলীয় প্রধানের ভ্রমণ ব্যয় এতে যোগ হবে না। নির্বাচনি প্রচার, পোস্টার প্রভৃতি খাতে ব্যয় করতে পারে দলগুলো। চাঁদা ও অনুদান অন্যান্য খাত থেকে আয় করতে পারে। তহবিলের জন্য দল ২০ হাজার টাকার বেশি দান চেক ব্যতীত গ্রহণ করতে পারবে না।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪ সিসিসি-বিধি অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোর নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটা অমান্য করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, এমনকি দলের নিবন্ধনও বাতিল করতে পারে ইসি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যয় সুবিধা পেয়েছিল। সে সময়ও প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং ভোটার প্রতি ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

আরপিও অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে দিতে হয়। কোনো প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ে মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলার দেওয়ার বিধান রয়েছে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যথাসময়ে ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইসি। সে সময় ভোটার প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ টাকা। সেবারও সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ২৫ লাখ টাকা।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার প্রতি গড় ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ টাকা। প্রার্থীপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা।

হাসান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়