ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১২ ১৪৩১

দেশের ১৯তম অর্থমন্ত্রী হলেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৫৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৪
দেশের ১৯তম অর্থমন্ত্রী হলেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী

আবুল হাসান মাহমুদ আলী

দেশের ১৯তম অর্থমন্ত্রী হলেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যিনি কূটনীতিক থেকে রাজনীতির মাঠে এসে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা ৪ বার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরে একাদশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও সেই সরকারে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। তবে এবার নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মাহমুদ আলী ১৯৪৩ সালের ২ জুন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুরের খানসামার ডাক্তারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ১৯৬২ সালে বিএ এবং ১৯৬৩ সাল এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন।

আরো পড়ুন:

১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের হয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনে তিনি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দ্বায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরার পর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হন। এরপর আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহমুদ আলী দিনাজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি নবগঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ আসনে আবুল হাসান মাহমুদ আলী আবারও নির্বাচিত হন। এবার তাকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণলয়ের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থমন্ত্রণালয়ের দয়িত্বপালনকারী মন্ত্রীরা হচ্ছেন, দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি ১৯৭২ সানের ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর দায়িত্ব পালন করেন। ড. এ আর মল্লিক ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। মে.জে. জিয়াউর রহমান দুই দফা অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে নেন।  প্রথমে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত এবং পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ সালে নির্বাচনের পর একই বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯৮০ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন ড.মির্জা নুরুল হুদা। ১৯৮০ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ১৯৮২ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এম. সাইফুর রহমান। ১৯৮২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ড. ফসিহ উদ্দিন মাহতাব।

এরশাদের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২ সালের ৩১ মার্চ থেকে ১৯৮৪ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৮৪ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৬ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে এবং ৩০ নভেম্বর ১৯৮৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম. সাইফুজ্জামান।

মে.জেনারেল (অব.) এম এ মুনএম ১৯৮৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৮ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালের ৬ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ড. ওয়াহিদুল হক। ১৯৯০ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবার দায়িত্ব পালন করেন মে. জেনারেল (অব.) এম এ মুনএম।

১৯৯০ সালে তীব্র জনঅসন্তোষের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কফিল উদ্দিন মাহমুদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এম. সাইফুর রহমান। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তিনি ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব  পালন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান এম হাফিজ উদ্দিন খান। তিনি অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নের্তৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করলে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথমে ২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ড. আকবর আলী খান, ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ড. শোয়েব আহমেদ এবং ২০০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল হক অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে টানা তিন মেয়াদে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা পঞ্চম বারের সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন দিনাজপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

হাসনাত/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়