ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়ানো হবে: মৎস্যমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪  
ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়ানো হবে: মৎস্যমন্ত্রী

গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ এর মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল কাইয়ূম। 

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-প্রধান মাসুদ আরা মমি। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী এবং নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।

মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক; মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে সম্পৃক্ত নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি’র প্রতিনিধিসহ ইলিশ সংক্রান্ত বিভিন্ন অংশীজনরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, ২০০১-০২ সালে ইলিশ উৎপাদনের যে প্রবৃদ্ধি ছিল এবং ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিল, সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। এ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন।

তিনি আরও বলেন, ইলিশ যেমন আমাদের গৌরবের জায়গা, তেমনই ইলিশ জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও একটা বড় ক্ষেত্র। তাই, একে লালন-পালন, পরিচর্যা এবং বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আরও বেশি উৎপাদন বাড়াতে চাই। সবাই যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখলে ইলিশের উৎপাদনে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, উল্লেখ করে মন্ত্রী ব‌লেন, দেশে ইলিশের অভায়শ্রম কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সে জায়গাগুলো থেকে উত্তরণ করা দরকার। ইলিশের বিচরণপথ সুগম ও নিরাপদ করতে হবে। তা না হলে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রকৃত মৎস্যজীবীদের একটা সুনির্দিষ্ট তালিকা করা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

‘মৎস্যজীবী বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা পালনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ করতে হবে। কেউ অবৈধ জাল ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি অভয়াশ্রম সম্পৃক্ত এলাকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে সামাজিক ক্যাম্পেইন করতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে তাদের জন্য ভিজিএফের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে,’ ব‌লেন মৎস্যমন্ত্রী।

দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত জেলেদের রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন মন্ত্রী। তি‌নি ব‌লেন, বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকা সত্ত্বেও মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য ইলিশের দাম অনেক শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের উদ্যোক্তাদের চেয়েও দ্বিগুণ লাভ করার মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

২০২৩ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ ইলিশ সফলভাবে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে, জা‌নি‌য়ে মন্ত্রী ব‌লেন, তা ভিত্তি বছর ২০০১-০২ এর তুলনায় ১০৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে, এ বছর প্রায় ৪০ দশমিক ৫৮ হাজার কোটি জাটকা নতুন করে ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণের সুফল পেতে হলে এ বছর উৎপাদিত ইলিশের পোনা (জাটকা) নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজলভ্য হবে বলে।

পরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ এর প্রতিবেদন শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ২০২৩ সালে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৩ বাস্তবায়ন করা হয়। এ সময় দেশের ইলিশ-সম্পৃক্ত ৩৮ জেলার ১৭৪ উপজেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৩ বাস্তবায়নকালে জেলে ও মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২২ দিনে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়